Wednesday, November 5
Home>>Uncategorized>>HSC Accounting Chapter-2: Books of Accounts
Uncategorized

HSC Accounting Chapter-2: Books of Accounts

উচ্চমাধ্যমিক হিসাববিজ্ঞান

দ্বিতীয় অধ্যায়

হিসাবের বই সমূহ

Books of Accounts

 (এ অধ্যায়ে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি, হিসাব চক্র, জাবেদা, খতিয়ান, কারবারী বাট্রা ও নগদ বাট্রা এবং নগাদন বই এর আলোচনা করা হয়েছে। স্বল্প সংখ্যক উদাহরণের মাধ্যমে সবকটি বিষয় দেখানো হলো। শিক্ষার্থীগন একাধিক উৎস হতে বহু সংখ্যাক সমস্যা সমাধান করা অপেক্ষা এ অধ্যায়ে প্রদত্ত স্বল্প সংখ্যক উদাহরণ চর্চা করে অতি সহজে সম্পূর্ণ বিষয়টি আয়ত্তে আনতে সক্ষম হবে। মৌলিক এবং সাধারণ উদাহরণ সমূহ চর্চা করে আয়ত্তে আনার পর আত্ম-যাচাই মূলক সমস্যা সমূহ নিজে নিজে সমাধান করবে, অত:পর প্রদত্ত সমাধানের সাথে মিলিয়ে নিবে। যদি আত্ম-যাচাইয়ের সবকটি সমস্যার সমাধান নিজে নিজে করতে সক্ষম হয় তবে বুঝতে পারবে এ অধ্যায়ের উপর স্বচ্ছ ধারণা অর্জিত হয়েছে এবং পরীক্ষা উপযোগী যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।)

হিসাবের বই সমূহ

দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির ধারণা

হিসাব বিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা হলো  দ্বৈত নীতি (Dual aspect Concept)। হিসাব বিজ্ঞানের এ ধারণা অনুসারে হিসাবের বই সমূহ দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুসরণ করে সংরক্ষন করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের জন্য দুটি হিসাব লিপিবদ্ধ করতে হয়। উক্ত হিসাব হতে পারে সম্পদ বা দায়, আয় বা ব্যয় অথবা মূলধন। কোন একটি হিসাবে যে পরিমান অর্থ ডেবিট করা হয় তার বিপরীতে এক বা একাধিক হিবাবে সমপরিমান অর্থ ক্রেডিট করতে হয়। ফলশ্রুতিতে হিসাবের সকল বইয়ের ডেবিট দিকের যোগ ফল হিসাব সমূহের ক্রেডিট দিকের যোগ ফলের সমান হয়।

হিসাব বিজ্ঞানের দু’তরফা দখিলা পদ্ধতি অনুসারে গ্রহণ ছাড়া কোন প্রদান হতে পারে না। এখানে গ্রহণের বিষয়টি ডেবিট হিসেবে পরিচিত এবং প্রদানের বিষয়টি ক্রেডিট হিসেবে পরিচিত। সুতরাং প্রতিটি ডেবিটের বিপরীতে সমপরিমান ক্রেডিট থাকবে । এটি বিজ্ঞানী নিউটনের গতিসূত্রের সাথে তুলনা যোগ্য যাতে বলা হয়েছে “প্রতিটি ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীতমূখি প্রতিক্রিয়া আছে”। দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে সার্বজনিন হিসাবের নীতিমালা অনুসরণ করা হয় এবং হিসাব সমীকরণ অনুসরণ করে সকল লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়। দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুসারে হিসাব সমীকরণটি হবে নিম্নরুপ;

মালিক পক্ষের ইকুইটি + বহি:দায় = মোট সম্পদ (Equity+Liability=Total Assets)) অথবা

মূলধন+ দায়= মোট সম্পদ (Capital+ Liability=Total Assets)

হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়মাবলি

হিসাব চক্রের কাজ শুরু হয় লেনদেন সনাক্ত করার মাধ্যমে। লেনদেন হিসাবভুক্ত করার সময় প্রতিটি লেনদেনের জন্য ভাউচার তৈরী করা জরুরী। আর তার পূর্বে লেনদেনটি বিশ্লেষন করে কোন হিসাবটি ডেবিট হবে আর কোন হিসাবটি ক্রেডিট হবে তা নির্ণয় করতে হয়। যদিও এ কাজটি একেবারে প্রথমিক কাজ তথাপিও শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্ঠানের হিসাব রক্ষক ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয়ে প্রায়ই সংশয়ের মধ্যে পরে যায়। অথচ ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয়ে ভুল হলে সম্পূর্ণ হিসাব প্রকৃয়াটিই ভুলে নিপতিত হয়। এ জন্য খুব সতর্কতার সাথে ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয়ের কাজটি সম্পন্ন করতে হয়। হিসাব বিজ্ঞানে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ে দুটি বিধি বা পদ্ধতি রয়েছে। একটি গোল্ডেন রুল এবং অপরটি মডার্ন রুল হিসেবে পরিচিত। এ দুটি বিধি বা রুল অনুসরণ করে সহজেই ডেবিট ক্রেডিট নিরুপন করা সম্ভব। এ বইএ আমরা দুটি বিধির উল্লেখ করছি, তবে শিক্ষার্থীদের জন্য মডার্ন রুলটি অধিকতর সহজ ও প্রয়োগ উপযোগী হওয়ায় মডার্ন রুলটির উপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

ডেবিট এবং ক্রেডিট শব্দদ্বয় দ্বারা মূলত হিসাব বইয়ের পার্শ্ব নির্দেশ করে। ডেবিট শব্দ দ্বারা হিসাব বইয়ের বাম পার্শ্ব এবং ক্রেডিট শব্দ দ্বারা হিসাব বইয়ের ডান পার্শ্ব নির্দেশ করে। সকল পক্ষের নিকট হিসাবরক্ষন সহজবোধ্য এবং সম-গ্রহণযোগ্য করার জন্য ডেবিট এবং ক্রেডিট শব্দদ্বয় হিসাব বিজ্ঞানের একটি সংকেত বিশেষ। যেমন রাস্তায় গাড়ী চালানোর ক্ষেত্রে বিধি হলো চালক তার পথের বাম দিক দিয়ে গাড়ী চালাবে। এর ফলে রাস্তায় চলাচলরত সকলেই একে অপরের গতিবিধি বুঝতে পারে এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন গাড়ী চালানো সম্ভব হয়। একই ভাবে কোন প্রকৃতির লেনদেন কোন ধরনের হিসাব বইয়ের ডান দিকে লিপিবদ্ধ হবে এবং কোনটি বাম দিকে লিপিবদ্ধ হবে এ বিষয়ে যদি বিশ্বের সকল হিসাববিদগন একই বিধি প্রয়োগ করে তবে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের হিসাববিদ পৃথিবীর অন্য প্রান্তের হিসাববিদ কর্তৃক প্রনীত আর্থিক প্রতিবেদন বুঝতে এবং তা ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। আর তাই বিশ্বব্যাপি হিসাববিজ্ঞানের অভিন্ন বিধি অনুসরণ করা হয়। হিসাববিজ্ঞানের গোল্ডেন রুল এবং মডার্ন রুল একই ফলদায়ক বৃক্ষের দুটি শাখা মাত্র। যে বিধিই অনুসরণ করা হোক হিসাব বইয়ের লিখন ও হিসাবের ফলাফল হবে একই। নিচে প্রথমে গোল্ডেন রুল অত:পর মডার্ন রুল আলোচনা করা হলো। শিক্ষার্থীগন যে কোন একটি ব্যবহার করে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করবে।

গোল্ডেন রুল

গোল্ডেন ও মডার্ন উভয় রুল দুটি বুঝতে হলে প্রথমেই হিসাব বা একাউন্ট সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা ডেবিট ক্রেডিট এর নিয়মানুসারে লেনদেন সমূহ হিসাবভূক্ত করার মাধ্যম হলো হিসাব।

হিসাব হলো খতিয়ানভুক্ত একটি বিবরণী যেখানে কোন নির্দ্দিষ্ট ব্যক্তি, সম্পদ, আয় বা কোন বিষয় সংক্রান্ত সকল লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়। হিসাবের পৃষ্ঠা সমূহের একদিকে সুবিধা গ্রহণ এবং অপর পার্শ্বে সুবিধা প্রদানের বিবরণ থাকে।

হিসাব সংরক্ষনের জন্য সাধারণত হিসাব বইয়ে নিম্নোক্ত ধরনের হিসাব পৃষ্ঠা বা খতিয়ান পৃষ্ঠা ব্যবহার করা হয়;

হিসাবের শিরোনাম: আসবাবপত্র

তারিখ            বিবরণখতিয়ান পৃষ্ঠাডেবিট ক্রেডিট
     
     
     

অথবা

হিসাবের শিরোনাম: আসবাবপত্র

ডেবিটক্রেডিট
তারিখবিবরণখ.পৃটাকাতারিখবিবরণখ.পৃটাকা
        
        
        

হিসাবরক্ষনের উদ্দেশ্য হলো ব্যবসায় সংগঠিত সকল লেনদেনের পূর্ন রেকর্ড সংরক্ষন করা। এ উদ্দেশ্যে সকল লেনদেনকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে;

১.         ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট লেনদেন

২.         সম্পত্তি ও সম্পদের সাথে সংশ্লিষ্ট লেনদেন

৩.        আয়-ব্যয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট লেনদেন

প্রথম শ্রেণীভুক্ত লেনদেনকে ব্যক্তি বাচক হিসাব বা পারসোনাল একাউন্ট বলা হয়, দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত লেনদেন সমূহকে সম্পত্তি বাচক হিসাব বা রিয়েল একাউন্ট বলা হয় এবং তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত লেনদেন সমূহকে নামিক হিসাব বা নমিনাল একাউন্ট বলা হয়। হিসাবের শ্রেণীবিভাগ নিচের ছকে দেখানো যায়;

হিসাবের ধরণ অনুসারে নিম্নোক্ত ভাবে ডেবিট ক্রেডিট নিরুপন করা হয়;

হিসাবের ধরণ  অন্তর্ভূক্ত বিষয়  ডেবিট  ক্রেডিট

ব্যক্তি বাচক      প্রাকৃতিক, কৃত্রিম, প্রতিনিধিত্ব মূলক ব্যক্তি এ শ্রেণীভূক্ত           মূল্যের গ্রহীতা  মূল্যের দাতা

সম্পত্তি বাচক  দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল সম্পদ ও সম্পত্তি এ শ্রেণীভূক্ত   যাহা আসে       যাহা চলে যায়

নামিক হিসাব  আয় ও ব্যয় এ শ্রেণীভূক্ত          সকল ব্যয়        সকল আয়

ব্যক্তি বাচক হিসাব (Personal Accounts): কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠির সাথে কৃত লেনদেন সমূহ হলো ব্যক্তিবাচক হিসাব। ব্যক্তি বাচক হিসাব হতে পারে কৃত্রিম ও অকৃত্রিম বা কোন ব্যক্তিসমষ্ঠি সম্পর্কিত হিসাব। যেমন জকির হোসেন একজন ব্যক্তি, পদ্ধা টেক্সটাইল লি: আইনের দ্বারা গঠিত একটি কৃত্রিম ব্যক্তি স্বত্ত্বা এবং ব্যক্তি সমষ্ঠি হিসেবে সকল কর্মচারী । তাদের সাথে কৃত লেনদেন হবে ব্যক্তিবাচক হিসাব।

এক্ষেত্রে ডেবিট ক্রেডিট বিধি হবে; মূল্যের গ্রহীতা ডেবিট  এবং মূল্যের দাতা ক্রেডিট।

যেমন: জহিরকে পন্য ক্রয়ের বিপরীতে অগ্রীম প্রদান করা হলো। এখানে জহিরের নামে একটি হিসাব রাখতে হবে। এটি জহির নামক একজন ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট বিধায় ব্যক্তি বাচক হিসাব হবে। এখানে জহির মূল্যের গ্রহীতা বিধায় জহির হিসাব ডেবিট করা হবে।

সম্পত্তিবাচক হিসাব (Real Accounts): সম্পত্তি বা সম্পদের সাথে সম্পর্কিত লেনদেন সমূহ সম্পত্তি বাচক হিসেবে পরিচিত। সম্পত্তি বাচক হিসাব দু’ভাগে বিভক্ত; দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান। দৃশ্যমান সম্পদ হলো যেগুলো দেখা, ধরা-ছোয়া, বাস্তবে পরিমাপ ও ক্রয়-বিক্রয় করা যায়, যেমন নগদ অর্থ, ভুমি, দালান, মেশিন ও আসবাবপত্র। অদৃশ্যমান সম্পদ দেখা, ধরা-ছোয়া, বাস্তবে পরিমাপ ও হস্তান্তর করা যায় না, এটি অর্থের মূল্যে পরিমাপ ও ক্ষেত্র বিশেষে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। যেমন সুনাম, পেটেন্ট, কপিরাইট ও প্রাথমিক খরচ ইত্যাদি।

এক্ষেত্রে ডেবিট ক্রেডিট বিধি হবে; যে সম্পদ আসে তা ডেবিট এবং যে সম্পদ চলে যায় তা ক্রেডিট।

যেমন: এক লক্ষ টাকা নগদে একটি কম্পিউটার ক্রয় করা হলো। এখানে কম্পিউটার এবং নগদ উভয়টিই সম্পদ। এ লেনদেনে কম্পিউটার নামক সম্পদ এসেছে এবং নগদ নামক সম্পদ চলে গেছে। সুতরাং কম্পিউটার হিসাব ডেবিট হবে এবং নগদান হিসাব ক্রেডিট হবে।

নামিক হিসাব (Nominal Accounts): আয়, ব্যয়, লাভ ও লোকসান সংক্রান্ত হিসাব সমূহ নামিক হিসাবের অন্তর্ভূক্ত। বেতন ও মজুরী, ভারা, বীমা, কমিশন ও সুদ এ হিসাবের উদাহরণ।

এক্ষেত্রে ডেবিট ক্রেডিট বিধি হবে; সকল ব্যয় ও লোকসান ডেবিট এবং সকল আয় ও মুনাফা ক্রেডিট।

যেমন করিম এক লক্ষ টাকার পন্য বিক্রয় করে বিক্রয় কর্মিকে পাচ হাজার টাকা মাসিক বেতন পরিশোধ করেছে। এখানে বিক্রয় এবং বেতন উভয়টি নামিক হিসাব। বেতন তথা ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বেতন হিসাব ডেবিট হবে এবং আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রয় হিসাব ক্রেডিট হবে।

আধুনিক পদ্ধতি (Modern Rule)

ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের আধুনিক পদ্ধতিটি বুঝা, আয়ত্ত ও প্রয়োগ করা অপেক্ষাকৃত সহজ। শিক্ষার্থীগন দুটি পদ্ধতির মধ্যে আধুনিক পদ্ধতির অনুসরণ করে সহজেই ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করতে সক্ষম হবে এবং এ পদ্ধতিতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক কম। নিচে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের আধুনিক পদ্ধতিটি সবিস্তারে বর্ণিত হলো:

আধুনিক পদ্ধতি অনুসারে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের ছক:

হিসাবের ধরণডেবিটক্রেডিট
সম্পদ হিসাবযে হিসাব বৃদ্ধি পায়যে হিসাব হ্রাস পায়
দায়/মূলধন হিসাবযে হিসাব হ্রাস পায়যে হিসাব বৃদ্ধি পায়
আয় হিসাবযে হিসাব হ্রাস পায়যে হিসাব বৃদ্ধি পায়
ব্যয় হিসাবযে হিসাব বৃদ্ধি পায়যে হিসাব হ্রাস পায়

আধুনিক পদ্ধতিতে সকল পর্যায়ের সকল লেনদেনগুলোকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, তা হতে পারে আয় বা ব্যয়, হতে পারে দায় অথবা সম্পদ। । ব্যক্তি পর্যায় হোক আর প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে হোক সকল আর্থিক লেনদেনের প্রত্যেকটি কোন না কোন একটি শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত হবে। এ পদ্ধতিতে ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয়ে প্রথমে লেনদেনের প্রকৃতি অনুসারে এটি কোন শ্রেণীভুক্ত হবে তা নির্ণয় করতে হবে, অত:পর লেনদেনের কারণে উক্ত শ্রেণীর লেনদেনটি বৃদ্ধি পেয়েছে, না হ্রাস পেয়েছে তা নির্ণয় করতে হবে এবং বিধি অনুসারে হিসাবটি ডেবিট বা ক্রেডিট করতে হবে। উক্ত চারটি হিসাব নিম্নোক্তভাবে চিহ্নিত করা যাবে।

সম্পদ:সম্পদ বলতে অতীতের কোন ঘটনায় অর্জিত এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রনভুক্ত সে সকল ব্যবহারযোগ্য উপকরণকে বুঝায় যা হতে ভবিষ্যতে আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে। যেমন নগদ অর্থ, ব্যাংক উদ্ধৃত্ত, ভুমি, দালান, প্রাপ্য হিসাব, আসবাবপত্র ইত্যাদি। এ সকল সম্পদ লেনদেনের কারণে হ্রাস-বৃদ্ধি পায়।

দায়: অতীতের ঘটনা হতে উদ্ভোত বর্তমান দায়বদ্ধতাকে বুঝায় যা উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ বা মিমাংশা করতে হবে এবং এ কারণে আর্থিক সুবিধা সংশ্লিষ্ট সহায়-সম্পদের বহি:গমন হবে। যেমন ব্যাংক ঋন, কোন ব্যাক্তির নিকট হতে গৃহীত ঋন, বাকিতে ক্রয়ের কারণে সরবরাহকরীকে প্রদেয় মূল্য ইত্যাদি। মূলধন একধরনের দায়, পৃথক সত্ত্বা ধরণা অনুসারে ব্যবসায়ের মালিকও একটি পৃথক স্বত্ত্বা হওয়ায় তাঁর নিকট হতে প্রাপ্ত অর্থও ব্যবসায়ের এক প্রকার ঋন, তবে এটি মালিকের প্রাপ্য হওয়ায় তাকে ঋনের পরিবর্তে মূলধন বলা হয়। লেনদেনের কারনে দায় ও মূলধনের পরিমানে হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে।

আয়:আয় হলো সে সকল আর্থিক সুবিধা (মালিকের কাছ থেকে পাওয়া মূলধন ব্যতিত), যা ব্যবসায়ের সম্পদ বৃদ্ধি করে বা দায় হ্রস করে। যেমন বিক্রয় বা সেবা হতে আয়, সঞ্চয় পত্রের সুদ, সম্পদ লিজ হতে প্রাপ্ত/প্রাপ্য ভাড়া ইত্যাদি।

ব্যয়: মূলধন ফেরত বা মালিককে প্রদান ব্যতিত যে ঘটনা বা লেনদেনের কারনে সম্পদ হ্রাস বা দায় বৃদ্ধি পায় উক্ত ঘটনাই হলো ব্যয়। যেমন কর্মচারীর বেতন, অফিস ভাড়া, ঋনের সুদ ইত্যাদি।

ব্যক্তি পর্যায়ে হোক আর প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে হোক সকল হিসাব উপরোক্ত চারটি শ্রেণীর কোন একটিতে বিভাজিত হবে এবং লেনদেনের কারনে উক্ত চারটি শ্রেণীর অন্তত: দুটি হিসাবের একটি বৃদ্ধি পায় এবং অপরটি হ্রাস পায় অথবা যে কোন দুটি হিসাবই বৃদ্ধি পায় অথবা হ্রাস পায়। হিসাবের ধরণ ও  হ্রাস বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে উপরোক্ত ছক অনুসারে ডেবিট ক্রেডিট নিরুপন করা যায়। বাস্তব উদাহরণ হতে বিষয়টি সহজেই বুঝা যায়।

যেমন জনাব আব্দুর রহমান অধ্যায়ন শেষ করে কলেজ শিক্ষকতায় যোগদান করেছেন। তিনি যে অর্থ বেতন হিসাবে পান তা তাঁর আয়। আয় বৃদ্ধি পেতে পারে বা হ্রাস পেতে পারে। প্রতিমাসে যখন বেতন গ্রহণ করেণ বা প্রাপ্য হয় তা আয় বৃদ্ধি ঘটায় সুতরাং ছক অনুসারে আয় হিসাব ক্রেডিট হবে এবং একই সময়ে উক্ত আয়ের জন্য তার হাতে নগদ নামক সম্পদের পরিমান বৃদ্ধি পায়, ফলে ছক অনুসারে হাতে নগদ নামক সম্পদটি ডেবিট করতে হবে।

কখনো আয় হ্রাস পেতে পারে। যেমন বছর শেষে দেখা গেলো জনাব আব্দুর রহমানকে কারনিক ভুলক্রমে বেশী বেতন প্রদান করেছিলেন। এমতাবস্থায় অতিরিক্ত প্রদত্ত বেতন অফিস তার হিসাব হতে আদায় করবে এবং এই ঘটনায় তার আয় হ্রাস পাবে এবং হাতে নগদ/ব্যাংক উদ্ধৃত্ত নামের সম্পদ হ্রাস পাবে অথবা টাকা ফেরত দেয়া না হলে দায় বৃদ্ধি পাবে। ফলে উক্ত ছক অনুসারে বেতন খাতে আয় ডেবিট হবে এবং হাতেনগদ/ব্যাংক উদ্ধৃত্ত ক্রেডিট হবে অথবা প্রদেয় নামক দায় হিসাব ক্রেডিট হবে।

উক্ত বেতনের অর্থ দ্বারা আব্দুর রহমান তার বাসার জন্য কিছু ভোগ্যপন্য ক্রয় করেণ। এ ঘটনার ফলে ভোগ্যপন্য খাতে জনাব আব্দুর রহমানের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একই সাথে তার হাতে নগদ নামক সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। এ ঘটনায় ছক অনুসারে ভোগ্যপন্য নামক ব্যয় হিসাবটি ডেবিট হবে এবং সম্পদ হ্রাস পাওয়ার কারণে হাতে নগদ নামক সম্পদটি ক্রেডিট হবে।

কখনো ব্যয় হ্রাস পেতে পারে। যেমন জনাব আব্দুর রহমান নিয়মিত আগোরা সুপার সপ হতে ভোগ্য পন্য ক্রয় করতেন। তিন মাস পর আগোরা এ মর্মে প্রচারমূলক ক্যাশব্যাক প্রস্তাব করে, যারা গত তিন মাসে গড়ে পাচ হাজার টাকার পন্য ক্রয় করেছেন তাদেরকে ক্রয় মূল্যের উপর ৫% নগদ ফেরত দেয়া হবে। এ ঘটনায় জনাব আব্দুর রহমানের ব্যয় হ্রাস পাবে এবং নগদ নামক সম্পদের পরিমান বৃদ্ধি পাবে। ফলে ছক অনুসারে ভোগ্যপন্য খাতে ব্যয় ক্রেডিট এবং হাতে নগদ ডেবিট হবে।

কিছুদিন পর জনাব আব্দুর রহমান তার বাসভবনের জন্য ২০% মার্র্জিনে ৫০,০০০ টাকা মূল্যের একটি সোফা সেট কিস্তিতে ক্রয় করে। এ ঘটনায় তার আসবাবপত্র নামক সম্পদের পরিমান বৃদ্ধি পায় ৫০,০০০ টাকা, ২০% মার্জিন পরিশোধ করতে নগদ সম্পদ হ্রাস পায় ১০,০০০ টাকা এবং দায় বৃদ্ধি পায় ৪০,০০০ টাকা। সুতরাং ছক অনুসারে তার আসবাবপত্র নামক সম্পদ ডেবিট হবে ৫০,০০০ টাকা, হাতে নগদ নামক সম্পদ ক্রেডিট হবে ১০,০০০ টাকা এবং পাওনাদার বা প্রদেয় হিসাব নামক দায় ক্রেডিট হবে ৪০,০০০ টাকা।

আধুনিক পদ্ধতির ছক মনে রাখার জটিলতা এড়ানোর জন্য অনেকে এ পদ্ধতির পরিবর্তে গোল্ডেন রুল অনুসরণকে সহজ মনে করেণ। অথচ আধুনিক পদ্ধতি মনে রাখার জন্য একটি ছোট বাক্য মনে রাখাই যথেষ্ট। আর বাক্যটি হলো “আয়-দায় বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট”। এবার এভাবে চিন্তা করুন আয় বৃদ্ধি পেলে যদি ক্রেডিট হয় তবে আয় হ্রাস পেলে ডেবিট হবে। আবার আয়ের বিপরীত হলো ব্যয়। সুতরাং আয় বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট হলে ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ডেবিট এবং ব্যয় কমলে ক্রেডিট হবে।

অপরদিকে দায় বৃদ্ধি পেলে যদি ক্রেডিট হয় তবে দায় হ্রাস পেলে ডেবিট হবে । দায়ের বিপরীত যেহেতু সম্পদ সেহেতু দায় বৃদ্ধির ফলে ক্রেডিট হওয়ার কারনে স্বাভাবিক ভাবেই সম্পদ বৃদ্ধি পেলে ডেবিট এবং সম্পদ হ্রাস পেলে ক্রেডিট হবে।

এভাবে আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে সহজেই হিসাবের ডেবিট ক্রেডিট নিরুপন করা যায়। এ বই এর জাবেদা ও খতিয়ান বর্ণনা করার সময় এ পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগ ব্যাখ্যা করা হবে।

হিসাব চক্র (Accounting Cycle)

হিসাব প্রক্রিয়ার লেনদেন সংগঠিত হওয়া থেকে শুরু করে চুড়ান্ত হিসাব প্রনয়ন পর্যন্ত সকল কার্যাদির ক্রমবিন্যাসই হলো একাউন্টিং সাইকেল বা হিসাবচক্র। কারবারের হিসাব তথ্য আর্থিক প্রতিবেদনে প্রদর্শিত হয়। আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতের পূর্বে হিসাবরক্ষককে ব্যবসায়ের হিসাব তথ্য সংগ্রহ করে তা লিপিবদ্ধ করতে হয়, শুদ্ধতা পরীক্ষা করতে হয়। হিসাব চক্রটি নিচের চিত্রে দেখানো হলো;

হিসাব চক্রের ধাপসমূহের বর্ণনাঃ

১.         লেনদেন সনাক্ত করণ ও বিশ্লেষন

হিসাব রক্ষনের কার্যধারা শুরু হয় ব্যবসায়িক লেনদেন ও ঘটনা সমূহ সনাক্ত করণ এবং বিশ্লেষনের মধ্য দিয়ে। সকল ঘটনা ও লেনদেন ব্যবসায়ের হিসাবের অন্তর্ভূক্ত হয় না। কেবল মাত্র ব্যবসায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট লেনদেন সমূহ হিসাব প্রক্রিয়ার অন্তর্ভূক্ত হয়। যেমন কর্মচারীদের বেতন, অফিস ভাড়া, বিজ্ঞাপন ব্যয় ইত্যাদি। মালিকের ব্যক্তিগত তহবিল হতে পরিশোধিত ব্যক্তিগত আয়কর, মালিকের ব্যক্তিগত ঋন, কারবার কর্তৃক কাষ্টমারকে দেয়া দরপত্র ইত্যাদি কারবারের হিসাবে কোন প্রভাব সৃষ্টি করে না। সুতরাং এ সকল লেনদেন ও ঘটনা ব্যবসায়ের লেনদেন নয়।

লেনদেন সনাক্ত করার পর লেনদেনটি হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করার পূর্বে হিসাবখাত ও ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয়ের জন্য লেনদেন বিশ্লেষন করা হয়। ব্যবসায়ের প্রতিটি লেনদেনের শুরুতেই প্রামান্য দলিল প্রস্তুত করা হয়। উক্ত দলিল লেনদেন বিশ্লেষন, হিসাবের খাত চিহ্নিত করণ ও হিসাবভুক্ত করার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

লেনদেন সনাক্ত করণ ও বিশ্লেষনকালে নিচের বিষয় সমূহ বিবেচনা করা হয়;

ক. ঘটনাটি লেনদেন কি না? অর্থ্যাৎ আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সাধন করেছে কি না?

খ. লেনদেনটি কোন শ্রেনীভুক্ত; সম্পদ না দায়, আয় না ব্যয়?

গ. লেনদেনটি কোন কোন হিসাবকে প্রভাবিত করবে?

ঘ. কোন হিসাব ডেবিট হবে এবং কোন হিসাব ক্রেডিট হবে?

২.         জাবেদাভুক্ত করণ

বিশ্লেষনের পর দু’তরফা দাখিলা নীতি অনুসারে লেনদেন সমূহ হিসাব শিরোনাম ও ডেবিট-ক্রেডিট উল্লেখ করে জাবেদায় ক্রমধারায় লিপিবদ্ধ কর হয়। জাবেদায় প্রতিটি লেনদেন অন্ততঃ দুটি হিসাকে লিখিত হয়। ব্যবসায়ে সংঘঠিত লেনদেন গুলো কোন হিসাবের (খতিয়ানের) কোন দিকে (ডেবিট বা ক্রেডিট) লিখতে হবে, জাবেদায় লিখিত দফা গুলো তা নির্দেশ করে।

হিসাব প্রক্রিয়া সহজ করতে প্রতিনিয়ত সংঘঠিত লেনদেনের জন্য বিশেষ জাবেদা সংরক্ষন করা হয়, যেমন ক্রয়, বিক্রয়, নগদ গ্রহণ ও প্রদান। অন্যান্য লেনদেনের জন্য সাধারণ জাবেদা রাখা হয়। জাবেদা হলো হিসাবের প্রাথমিক বই।

৩.        খতিয়ানভুক্ত করণ

এ পর্যায়ে লেনদেন সমূহ জাবেদা হতে খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করা হয়। জাবেদাতে প্রতিটি লেনদেনের গন্তব্য স্থল অর্থাৎ খতিয়ন শিরোনাম এবং ডেবিট-ক্রেডিট নির্দেশ করা থাকে। ফলে জাবেদা হতে লেনদেন সমূহ খুব সহজেই খতিয়ানে স্থানান্তর করা যায়। ‘খতিয়ান’ হিসাব শিরোনাম অনুসারে সাজানো থাকে। প্রতিটি হিসাব শিরোনামের জন্য পৃথক খতিয়ান পৃষ্ঠা থাকে এবং একই হিসাব শিরোনামের অধীনে সংঘটিত সকল লেনদেন উক্ত খতিয়ান পৃষ্ঠায় ক্রমধারায় লিখিত হয়। সকল লেনদেন সমূহ লিপিবদ্ধ করার পর উক্ত হিসাবের উদ্ধৃত্ত নিরুপন করা হয়। যেমন নগদান বই একটি খতিয়ান। সকল নগদ লেনদেন এ বইতে ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং দিনের সকল লেনদেন লিপিবদ্ধ করার পর নগদ উদ্ধৃত্ত নিরুপন করা হয়।

৪.         অসমন্বিত রেওয়ামিল

খতিয়ানের জের তথা উদ্ধৃত্ত হতেই প্রস্তুত হয় আর্থিক বিবরণী। তবে খতিয়ানের লিখনে কোন ভুলভ্রান্তি আছে কি না তা যাচাই করার জন্য এবং খতিয়ানের জের হতে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত সহজ করার জন্য এ পর্যায়ে খতিয়ানের জের সমূহ হতে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়। রেওয়ামিল আর কিছুই নয়, এটি হলো খতিয়ানের জের সমূহের একটি বিবরণী বিশেষ। এর দুটি দিক থাকে, একটি ডেবিট এবং অপরটি ক্রেডিট। সম্পদ ও ব্যয় জাতীয় হিসাব শিরোনাম সমূহ ডেবিট দিকে এবং দায় ও আয় জাতীয় হিসাব শিরোনাম সমূহ ক্রেডিট দিকে লিখা হয় এবং প্রত্যেকটি শিরোনামের বিপরীতে উক্ত ক্ষতিয়ানের সমাপনী জের বা উদ্ধৃত্ত লিখা হয়। দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে যেহেতু যে পরিমান এক হিসাবে ডেবিট দিকে লিখা হয়, সমপরিমান মূল্য অন্য হিসাবে ক্রেডিট দিকে লিখা হয় এবং উক্ত হিসাব সমূহের ডেবিট উদ্ধৃত্ত রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে এবং হিসাব সমূহের ক্রেডিট উদ্ধৃত্ত রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে স্থানান্তর করে রেওয়ামিল তৈরী করা হয়, সেহেতু রেওয়ামিলের উভয় দিকের যোগ ফল সমান হয়। রেওয়ামিলের উভয়দিক সমান না হলে হিসাব প্রক্রিয়ার কোন না কোন পর্যায়ে ভুল থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে রেওয়ামিল উভয় দিক মিলে গেলেও হিসাবের নির্ভুলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। রেওয়ামিল উভয় দিক মিলে গেলেও হিসাব প্রক্রিয়ায় ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে।

৫.         সমন্বয় দাখিলা

কোন একটি হিসাবকাল শেষে খতিয়ানের জেরসমূহ স্থানান্তর করে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়। হিসাবকাল সমপনান্তে কিছু সংঘটিত ব্যয় ও অর্জিত আয় থাকে যা হিসাবভুক্ত হওয়া প্রয়োজন ছিল অথচ খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি, যেমন সম্পদের উপর অবচয় এবং ঋনপত্রে বিনিয়োগ হতে প্রাপ্য সুদ।আর্থিক বিবরণীতে এ সকল অর্জিত আয় এবং সংঘঠিত ব্যয় এর প্রভাব প্রদর্শনের জন্য সমন্বয় দাখিলার মাধ্যমে উক্ত আয় ও ব্যয় হিসাবভুক্ত করা হয়।

৬.        সমন্বিত রেওয়ামিল

অসমন্বিত রেওয়ামিল প্রস্তুতের পর সমন্বিত দাখিলার মাধ্যমে সমন্বিত রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়। সমন্বিত রেওয়ামিল প্রস্তুত  করে উহা হতে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়।

৭.        আর্থিক বিবরণী

সমন্বিত দাখিলার মাধ্যমে হিসাব হালনাগাদ করা ও রেওয়ামিলের দু পার্শ্বের যোগ ফল মিলে যাওয়ার পর আর্থিক বিবরণী তৈরী করা হয়। আর্থিক বিবরণীই হলো হিসাবচক্রের সর্বশেষ ধাপ। আর্থিক বিবরণীর অংশ সমূহ হলো;

ক. লাভ-লোকসান হিসাব, খ. উদ্ধৃত্তপত্র, গ. নগদ প্রবাহ বিবরণী, ঘ. ইকুইটি পরিবর্তনের বিবরণী, ঙ. হিসাবের ব্যাখ্যা।

৮.        সমাপনী দাখিলা

আর্থিক বিবরণী তৈরী করার পর একটি হিসাবকালের হিসাব প্রক্রিয়া শেষ হয় এবং তার পরবর্তী দিন হতে নতুন হিসাব কাল শুরু হয়। সমাপনী দাখিলার মাধ্যমে সমাপ্ত হিসাব কালের হিসাবের বইয়ের জের সমূহ নতুন বছরের হিসাব বইয়ের প্রারম্ভিক জের হিসেবে স্থানান্তর করা হয়।এই সমাপনী দাখিলার মাধ্যমে সমাপ্ত হিসাবকালের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাবকালের হিসাববই খোলা হয়।

হিসাব প্রক্রিয়া তথা হিসাব বিজ্ঞানের কার‌্যাবলী বুঝার ক্ষেত্রে হিসাব চক্র খুবই গুরুত্বপূণ। এখানে হিসাব চক্রের বিষয়ে একটি প্রাথমিক ধারণা দেয়া হলো। এ বইয়ের পরবর্তী অধ্যায় সমূহে হিসাব চক্রের প্রতিটি ধাপ উদাহরণসহ আলোচনা হবে। তবে হিসাব চক্রটি অধ্যয়নের শুরুতেই ভালভাবে বুঝার সুবিধার্থে একটি উদাহরণের মাধ্যমে হিসাব চক্রটি ব্যাখ্যা করা হলো।

উদাহরণ:

নিচে উল্লেখিত সর্দার ট্রেডিং এর লেনদদেন সমূহের সাহায্যে হিসাব চক্রের প্রতিটি ধাপ সমাপন কর;

তারিখ  বিবরণ

জানু-১ নগদ ২০০,০০০ টাকা এবং ২৫০,০০০ টাকা মূল্যের পন্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করলো।

২        ব্যাংকে জমা দেয়া হলো ১৫০,০০০ টাকা

৩        বাড়ীর মালিকের অনুকুলে জমানত হিসেবে ২০,০০০ টাকার চেক প্রদান করা হলো।

৪        অফিসের জন্য নগদে আসবাবপত্র ক্রয় করা হলো ১৫,০০০ টাকা ।

৪        ডেসাকে জমানত হিসাবে ৫,০০০ টাকা এবং সংযোগ ব্যয় ২,০০০ টাকা প্রদান করা হলো।

৫        ব্যবসায়ের ব্যাংক হিসাবে মালিক নিজস্ব তহবিল হতে ৫,০০,০০০ টাকা জমা করেছে।

৬        বাকিতে ক্রয় ১৮০,০০০ টাকা।

৭        নগদে পন্য ক্রয় ২,০০,০০০ টাকা এবং পরিবহণ ব্যয় প্রদান করা হয়েছে ২,০০০ টাকা।

৮        নগদে বিক্রয় ১৮০,০০০ টাকা এবং ৩০ দিনের বাকিতে বিক্রয় ১৫০,০০০

৯        বিক্রয় পরিবহণ ২,৫০০ টাকা

১০     কম্পিউটার ক্রয় ৪০,০০০ টাকা।

১১      ব্যাংক ঋন গ্রহণ ৩৫০,০০০ টাকা।

১২      ব্যাংক হতে নগদ উত্তোলন ৩৫,০০০ টাকা

১৩     অফিসের ব্যবহারের জন্য মটর গাড়ী ক্রয় ১৫০,০০০ টাকা

১৪      একটি দোকান ক্রয় ৭৫০,০০০ টাকা যার মূল্য ৬০% চেকে এবং অবশিষ্ট ব্যাংক ঋনের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে।

১৫      ব্যবসায়িক চাদা  প্রদান ১০,০০০ টাকা

১৬     ১৫০,০০০ টাকা পাওনার পূর্ণ নিস্পত্তির শর্তে ১৪০,০০০ টাকা প্রদান করা হলো।

১৭     ৫০ টাকা প্রতিটির মূল্য ধরে ১০০০ সংখ্যক শার্টের ক্রয়াদেশ পওয়া গেলো।

১৭     বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে এসআইবিএল এর শেয়ার ক্রয় করা হয়েছে ৭০,০০০ টাকা যার মূল্য চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে।

১৮     আজাদ আলীর নিকট পন্য বিক্রয় করা হয়েছে ৮০,০০০ টাকা এবং এর উপর ভেট আরোপ করা হয়েছে ৪%।

১৮     মিউনিসিপ্যাল কর প্রদান করা হয়েছে ১,০০০ টাকা।

১৯      বিবিধ ব্যয় ২,৫০০ টাকা।

১৯      দেনাদারের নিকট হতে আদায় হয়েছে ৮,০০০ টাকা।

২০     ব্যাংক হতে উত্তোলন ২০,০০০ টাকা।

২১      বীমা সেলামী পরিশোধ ২,০০০ টাকা।

২২      গুদাম ভাড়া প্রদান ১,৫০০ টাকা।

২২      মালিকের আবাসিক বাড়ী ভাড়া প্রদান করা হয়েছে ১০,০০০ টাকা।

২৩     কারবারের মালিক হায়দার আলী তার ব্যক্তিগত নামে ৫০,০০০ টাকার এফডিআর নগদায়ন করেছে এবং ৫,০০০ টাকা সুদ অর্জন করেছে। সমূদয় টাকা ব্যবসায়ে প্রদান করেছে।

২৪      হায়দার আলী তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নিজ তহবিল হতে একটি রিফ্রেজারেটর ক্রয় করেছেন ৫০,০০০ টাকা।

২৬     মুন হসপিটালে বকীতে বেড কভার সরবরাহ করা হয়েছে ১৬,০০০ টাকা।

২৭     নগদ ক্রয় ৬০,০০০ টাকা।

২৮     নগদ বিক্রয় ৭০,০০০ টাকা।

৩০     অফিস ভাড়া প্রদান ৬,০০০ টাকা।

৩১     বেতন প্রদান ৯,০০০ টাকা।

৩১     সমাপনী মজুদ পন্য মূল্যায়ন করা হয়েছে ৩৫০,০০০ টাকা

সমাধান

(শিক্ষার্থীর চর্চা এবং অনুধাবন উপযোগী সমাধান)

বাকি অংশ দেখার জন্য নিচের পিডিএফ (PDF) ফাইল ডাউনলোড করুন।

এ সিনোপসিস এর উপর ভিডিও দেয়া আছে। দেখে নিতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *