উচ্চমাধ্যমিক হিসাববিজ্ঞান
অধ্যায়-৭
কার্যপত্র (Work Sheet)
ভুমিক (Introduction)
হিসাব রক্ষণের কাজ গুলোর মধ্যে সর্বশেষ ধাপ হলো হিসাব তথ্যের ব্যবহারকরীদের জন্য আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা। আর্থিক প্রতিবেদনের পাচটি অংশ রয়েছে; আয় বিবরণী, উদ্বৃত্তপত্র, নগদ প্রবাহ বিবরণী, মূলধন/মালিকানা স্বত্ব পরিবর্তনের বিবরণী এবং হিসবের টিকা সমূহ। কোন কোম্পানী বা কারবারী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষ সমূহ উক্তপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন হতে কারবারের আর্থিক অবস্থা, ব্যবসায়িক দক্ষতা, বিনিয়োগ সম্ভ্যাব্যতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা লাভ করতে চায়। তা ছাড়া দেশীয় আইনের পরিপালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারী সংস্থাকে যেমন কর বিভাগ, এনজিও অ্যাফেয়ার্স বূরো ইত্যাদি আর্থিক প্রতিবেদন সরবরাহ করতে হয়। এ কারনে নির্ভুল আর্থিক প্রতিবেদন তৈরী করতে প্রতিটি কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানআইনগত বাধ্য এবং একটি নৈতিক দায়িত্ব। হিসাব চক্রের প্রতিটি পর্যায় নির্ভুলভাবে অতিক্রম করে নির্ভুল আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা বিশেষ করে ম্যনুয়ালী প্রস্তুত করা একটি কষ্টসাধ্য এবং জটিল কাজ।
আধুনিক কালে নির্ভুলভাবে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরীর কাজকে সহজ করার জন্য কার্যপত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ কার্যপত্র হলো আর্থিক বিবরণী তৈরীতে ব্যবহৃত একটি স্প্রেডশীট বা বিস্তৃত পৃষ্ঠা, যার মধ্যে আট থেকে বারটি ঘড় থাকে। হিসাব চক্রের একাধিক পর্যায়ের কাজ যেমন খসরা অসমন্বিত রেওয়ামিল, সমন্বিত জাবেদা, সমন্বিত রেওয়ামিল এবং আর্থিক বিবরণী ইত্যাদি কার্যপত্রের ঘর সমূহে পাশাপাশি দেখানো হয়।
কার্যপত্র সাধারণত হিসাবকাল শেষে প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে হিসাব শিরোনামের একটি তালিকাঅন্তর্ভুক্ত থাকে এবং শিরোনামের বিপরীতে খতিয়ান উদ্বৃত্ত উল্লেখ থাকে। খতিয়ান উদ্বৃত্ত সমূহকে সমন্বিত জাবেদার সাহায্যে হালনাগাদ করে সমন্বিত রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয় এবং রেওয়ামিলের দফা সমূহ আর্থিক বিবরণীর ঘরে স্থানান্তর করে আর্থিক বিবরণী তৈরী করা হয়। কার্যপত্রের ঘর গুলো যথাযথ ভাবে পূরণ করে সহজেই আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা যায়।
হিসাব বিবরণী প্রস্তুতের জন্য হিসাবরক্ষক খসড়া হিসাবে কার্যপত্র ব্যবহার করে। এটি সাধারণত হিসাবরক্ষকদের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য তৈরী করা হয়। এর মধ্যে কয়টি ঘড় সন্নিবেশিত হবে তা প্রতিষ্ঠানের আকার, ধরণ এবং হিসাবের পরিধির উপর নির্ভর করে ঠিক করা হয়। কার্যপত্রের জন্য প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্নভিন্ন কাঠামো ব্যবহার করা হতে পারে।কার্যপত্রে হিসাব বিবরণীর মতো কোন সুনির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করা জরুরী নয়। প্রতিষ্ঠান সমূহ তাদের অভ্যন্তরীণ কাজের জন্য সুবিধাজনক কার্যপত্র সাজিয়ে নিতে পারে।
হিসাব কাজ সহজকরণসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে হিসাবরক্ষক কার্যপত্র ব্যবহার করতে পারে। কার্যপত্র হিসাবে ভুলের ঝুকি হ্রাস করে, ভবিষ্যতে কার্য সূত্র খুজে পেতে সাহায্য করে, সমন্বিত জাবেদা সমূহের প্রভাব প্রদর্শিত হয়, ব্যবস্থাপনা হিসাব পরীক্ষার ক্ষেত্রে কার্যপত্রের সাহায্য গ্রহণ করতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক পরিকল্পনা প্রনয়নে সাহায্য করে।
সর্বোপরী অন্তর্বর্তী হিসাব বিবরণী প্রস্তুতে কার্যপত্র ব্যাপকভাবে সাহায্য করে এবং হিসাব চুড়ান্ত হওয়ার আগে কার্যপত্র ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত গ্রহণেসাহায্য করে।
কার্যপত্রের বহুল ব্যবহার থাকলেও এটি হিসাব চক্রের কোন অংশ নয়। এটি প্রস্তুত করারও কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বরং এটি একটি সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক কাজ। শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ কাজের সুবিধার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
কার্যপত্রের সংজ্ঞা (Defination of Worksheet)
কার্যপত্র হলো হিসাব বিবরণীর সাথে সম্পর্কিত বহুঘর বিশিষ্ট একটি অনানুষ্ঠানিক বিবরণী যেখানে হিসাবরক্ষক হিসাব বিবরণী চুড়ান্ত করার আগে সমন্বিত রেওয়ামিলে হিসাব তথ্য সমূহ লিপিবদ্ধ করে।
কার্যপত্র বলতে এমন একটি কাগজ বা কম্পিউটারের পৃষ্ঠাকে(ঊীপবষ ঝযববঃ) নির্দেশ করে যাতে একজন হিসাবরক্ষক আর্থিক বিবরণী তৈরীর জন্য ব্যবসায়িক লেনদেনের তথ্য সমূহ সাজিয়ে থাকে। উক্ত পৃষ্ঠায় রেওয়ামিল, সমন্বিত জাবেদা, সমন্বিত রেওয়ামিল, লাভ-লোকসান হিসাব এবং উদ্বৃত্তপত্র দেখানোর মত যথেষ্ট পরিমাণ ঘর থাকে।
সুতরাং কার্যপত্র বলতে বহুঘর বিশিষ্ট কাগজের পৃষ্ঠা বা কম্পিটারের স্প্রেডশীট নির্দেশ করে যেখানে কোন হিসাবকাল শেষে রেওয়ামিল, সমন্বিত জাবেদা, সমন্বিত রেওয়ামিল, লাভ-লোকসান হিসাব এবং উদ্বৃত্তপত্র একত্রে দেখানো হয়।
কার্যপত্রের বৈশিষ্ট্য (Features of Work Sheet)
হিসাব বিবরণী নির্ভুলভাবে প্রস্তুতের লক্ষ্যে কার্যপত্র তৈরী করা হয়। কার্যপত্র হিসাব বিবরণী প্রস্তুতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও এটি হিসব চক্রের বহির্ভূত একটি কাজ। হিসাবচক্রের অন্যান্য পর্যায় হতে কার্যপত্র একটি আলাদা প্রকৃতির বিবরণী। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য সমূহ হলো;
১. কার্যপত্র বহুঘর বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এর ঘরের সংখ্যা ৮ থেকে ১২
২. কার্যপত্রে এক সাথে রেওয়ামিল, সমন্বিত রেওয়ামিল, লাভ-লোকসান হিসাব এবং উদ্বৃত্তপত্র প্রদর্শন করা হয়।
১. নির্দিষ্ট হিসাব কাল শেষে এটি প্রস্তুত করা হয়।
২. এটি একটি অনানুষ্ঠানিক বিবরণী এবং প্রস্তুত করা আবশ্যক নয়।
৩. এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা বিধায় উহা সংরক্ষণের প্রয়োজন নাই।
৪. যদিও এর মধ্যে লাভ-লোকসান হিসাব এবং উদ্বৃত্তপত্র প্রদর্শন করা হয়, এটি একটি খসড়া বিবরণী বিধায় এর বিধিবদ্ধ স্বীকৃতি নাই।
৫. এর সাহায্যে নির্ভুল আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত তরান্বিত করা যায়।
কার্যপত্রের প্রস্তুত প্রনালী (Preparation procedures of Work Sheet)
কার্যপত্র আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের কাজকে সহজতর করে এবং লেনদেন সমূহ হিসাব বিবরণীতে নির্ভুলভাবে প্রদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করে। অধুনিককালে সাধারণত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সমূহ এক্সেল প্রোগ্রাম ব্যবহার করে কম্পিউটারে কার্যপত্র তৈরী করে। কম্পিউটারে কার্যপত্র তৈরী করা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়। তবে ছোট আকারের প্রতিষ্ঠান সমূহ বহু কলাম বিশিষ্ট কাগজে কার্যপত্র প্রস্তুত করে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের শেখার জন্য কাগজে কার্যপত্র প্রস্তুত করাই অধিক কার্যকর।
কার্যপত্র শুরু হয় রেওয়ামিল থেকে এবং শেষ হয় উদ্বৃত্তপত্র পস্তুতের মাধ্যমে। অর্থাৎ হিসাব চক্রের প্রথম তিনটি ধাপ (লেনদেন সমূহ চিহ্নিত ও বিশ্লেষন করা, জাবেদাভুক্ত করাএবং খতিয়ানভুক্ত করা) এর পরবর্তী ধাপ গুলো কার্যপত্রের মাধ্যমে সমাপ্ত করা হয়।
কার্যপত্রে এক সাথে রেওয়ামিল, সমন্বয় জাবেদা এবং সমন্বিত রেওয়ামিল, আয়-ব্যয় হিসাব এবং উদ্বৃত্তপত্র প্রদর্শন করা হয়।
কার্যপত্র প্রস্তুতের কাজটি পাচটি ধাপে সম্পন্ন হয়। নিচে তার ধারাবাহিক বর্ণনা দেয়া হলো;
প্রথম ধাপ
কোন কোন প্রতিষ্ঠানের ছাপানো কর্যপত্রের ছক থাকে। ছাপানো ছক না থাকলে কগজে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কলামসহ কর্যপত্রের ছক একে নিতে হয়। অত:পর বা দিক থেকে প্রথম কলামে হিসাব শিরোনাম সমূহ সম্পদ, দায়, ইকুইটি, আয় এবং ব্যয় ইত্যাদি প্রকৃতি অনুসারে ধারাবাহিক ভাবে লিখা হয়। উক্ত কলামের ডান দিকে রেওয়ামিলের জন্য দুটি কলাম রাখা হয়। একটিতে ডেবিট এবং অপরটিতে ক্রেডিট অংকসমূহ লিখতে হয়। খতিয়ানের ডেবিট উদ্বৃত্ত গুলো ডেবিট দিকে এবং ক্রেডিট উদ্বৃত্তগুলো ক্রেডিট কলামে সংশ্লিষ্ট শিরোনামের বিপরীতে লিখতে হবে। অত:পর উভয় কলাম যোগ করলে উভয় দিকের যোগ ফল সমান হবে এবং কার্যপত্রে রেওয়ামিল কলামের কাজ শেষ হবে।
দ্বিতীয় ধাপ
রেওয়ামিল মিলে যাওয়ার পরও উহার কোন কোন উদ্বৃত্তভুল অবস্থা প্রদর্শন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি উদ্বৃত্ত সঠিক পরিমানে প্রদর্শনের জন্য রেওয়ামিল কলামে উল্লেখিতহিসাবের কোন কোনটির সমন্বয় সাধন করে হাল নাগাদ করার প্রয়োজন হয়। সমন্বয় সমূহ দেখানোর জন্য কার্যপত্রের রেওয়ামিল এর প্রথম দুই কলামের ডান দিকে পরবর্তী দুটি কলাম রাখা হয়।হিসাবরক্ষক রেওয়ামিলের প্রতিটি দফা পরীক্ষা করে দেখবেন এগুলো সঠিক ভাবে প্রদর্শিত হয়েছে কি না। যদি দেখা যায় কোনটি সঠিক অবস্থা প্রদর্শন করছে না তবে সে সকল দফা সমূহ সঠিক ভাবে প্রদর্শনের জন্যসমন্বয়ের মাধ্যমেএর পরিবর্তন করতে হয়।
যেমন দেখা গেল রেওয়ামিলে প্রদর্শিত ক্রয় এর মধ্যে ৩১শে ডিসেম্ভরের ৫০,০০০ টাকার একটি ক্রয় অন্তর্ভুক্ত হয়নি ফলে মোট ক্রয় ৫৬,৫০,০০০ টাকার পরিবর্তে দেখানো হয়েছে ৫৬,০০,০০০ টাকা। এমতাবস্থায় ৫৬,০০,০০০ টাকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ক্রয় খাতে ৫৬,৫০,০০০ টাকা দেখাতে হবে। আবার দেখা গেল চলতি বছরে আসাবাব পত্রের উপর অবচয় ৪০,০০০ টাকা দেখানো হয়নি। ফলে রেওয়ামিলে আসবাবপত্র বেশী দেখানো আছে এবং অবচয় কম দেখানো আছে। সুতরাং প্রকৃত অবস্থা প্রদর্শনের জন্য উভয় হিসাবে সমন্বয় সাধন করে সমন্বিত উদ্বৃত্ত দেখাতে হবে।
এ সকল লেনদেন সমূহ অসমন্বিত রেওয়ামিলের দফা সমূহের সাথে যোগ বিয়োগ করে সমন্বিত রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়। সমন্বয়ের জন্য ব্যবহৃত দুটি কলামের ডান দিকে পরবর্তী দুটি কলামে সমন্বিত রেওয়ামিল দেখানো হয়।
তৃতীয় ধাপ
সমন্বিত রেওয়ামিলের ডান দিকের পরবর্তী দুটি কলামে আয়-ব্যয় হিসাব দেখানো হয়। একটি কলামে সকল আয় দেখানো হয় এবং অপর কলামে ঐ সময়ের সকল ব্যয় প্রদর্শিত হয়। রেওয়ামিল কলামের মধ্য হতে আয় সমূহকে আয় কলামে এবং রেওয়ামিলে প্রদর্শিত ব্যয় সমূহকে এই কার্যপত্রের ব্যয় কলামে দেখানো হয়। কার্যপত্রের রেওয়ামিল কলামের আয় এবং ব্যয় সমূহ কার্যপত্রের আয়-ব্যয় কলামে স্থানান্তরের পরে আয় কলাম এবং ব্যয় কলামের যোগ ফলের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা হয়। আয় কলামের মোট পরিমাণ ব্যয় কলাম হতে বেশী হলে পার্থক্যটি হবে মুনাফা এবং তা ব্যয় কলামের নিচের দিকে মুনাফা/লাভ শিরোনামে দেখানো হয়। পক্ষান্তরে আয় কলামের মোট পরিমাণ ব্যয় কলাম হতে কম হলে পার্থক্যটি হবে লোকসান এবং তা আয় কলামের নিচের দিকে ক্ষতি/লোকসান শিরোনামে দেখানো হয়।
চতুর্থ ধাপ
কার্যপত্রের আয়-ব্যয় দুটি কলামের পরের দুটি কলামে মালিকানা স্বত্ব/ইকুইটি বা মূলধন দেখানো হয়। সংশ্লিষ্ট হিসাব বছরের মধ্যে মালিকান স্বত্বে যে পরিবর্তন হয় তা এই দুই ঘরে প্রদর্শিত হয়। মালিকানা স্বত্ব বিষয়ক কলাম দুটির মধ্যে ক্রেডিট কলামে প্রথমে পূর্ববর্তী বছরের অবন্টিত মূনাফা অতপর চলতি বছরের মুনাফা দেখানো হয় এবং ডেবিট কলামে শেয়ার ধারকদের মধ্যে লভ্যাংশ বন্টন বা মালিক কর্তৃক উত্তোলন ও মুনাফার অন্যান্য বন্টন দেখানো হয়। ডেবিট এবং ক্রেডিট কলামের যোগফলের মধ্যে যে পার্থক্য হয় তাকে বলা হয় অবন্টিত মুনাফা। অবন্টিত মুনাফা কার্যপত্রের ডেবিট কলামের নিচের অংশে বসে।
পঞ্চম এবং শেষ ধাপ
কার্যপত্রের পরবর্তী দুটি কলাম তথা শেষ দুটি কলামে উদ্বৃত্তপত্রের দফা সমূহ দেখানো হয়। কলাম দুটির প্রথমটিতে সম্পদ ও অন্যান্য সম্পত্তি সমূহ দেখানো হয় এবং দ্বিতীয়টিতে দায় এবং অবন্টিত মুনাফা দেখানো হয়। এ দুটি কলামের পার্থক্যই হলো মালিকানা স্বত্ব বা নেটওর্থ। দায়ের দিকে মালিকানা স্বত্ব দেখানোর পর উভয় কলামের যোগ ফল সমান হবে।এ দুটি কলামের যোগ ফল সমান হলে ধরে নেয়া হয় হিসাব ওহিসাবের বই সমূহ সঠিক আছে এবং দুটি কলাম সমান না হলে কোথাও ভুল আছে বলে প্রতিয়মান হয়। এ পর্যায়ে কার্যপত্রের তথ্য সমূহ পর্যালোচনা করে এর ভুল উদঘাটন করে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের কাজ সম্পন্ন করা যায়।
কার্যপত্রের ছক (Formate of Work Sheet)
পূর্বে বলা হয়েছে কার্যপত্র হলো নির্ভুলভাবে হিসাব বিবরণী প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত বহুঘর বিশিষ্ট একটি বিবরণী যেখানে রেওয়ামিল, সমন্বয়, আয়-ব্যয় বিবরণী এবং উদ্বৃত্তপত্র দেখানো হয়। কার্যপত্রের ছক প্রতিষ্ঠানের আকার ও ধরণ অনুসারে ভিন্ন সংখ্যক কলাম বিশিষ্ট হতে পারে। সাধারণভাবে দশ কলাম বিশিষ্ট কার্যপত্র অধিক ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া আট কলাম এবং বার কলাম বিশিষ্ট কার্যপত্রও ব্যবহৃত হয়। দশ কলাম বিশিষ্ট কার্যপত্রে রেওয়ামিল, সমন্বয় সমূহ, সমন্বিত রেওয়ামিল, আয় বিবরণী এবং উদ্বৃত্তপত্র দেখানো হয়। আট কলাম বিশিষ্ট কার্যপত্রে সমন্বিত রেওয়ামিল দেখানো হয় না এবং বার কলাম বিশিষ্ট কার্যপত্রে দশ কলামের অতিরিক্ত মালিকানা স্বত্বের পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি কলাম সন্বিবেশিত হয়।
দশ কলাম বিশিষ্ট কার্যপত্রে ছক হবে নিম্নরুপ
| হিসাব শিরোনাম | রেওয়ামিল | সমন্বয় | সমন্বিত রেওয়ামিল | আয় বিবরণী | উদ্বৃত্তপত্র | |||||
| ডেবিট | ক্রেডিট | ডেবিট | ক্রেডিট | ডেবিট | ক্রেডিট | ডেবিট | ক্রেডিট | ডেবিট | ক্রেডিট | |
হিসাব শিরোনাম সমৃদ্ধ দশ কলাম বিশিষ্ট কার্যপত্রে ছক হবে নিম্নরুপ
| হিসাব শিরোনাম | রেওয়ামিল | সমন্বয় | সমন্বিত রেওয়ামিল | আয় বিবরণী | উদ্বৃত্তপত্র | |||||
| ডেবিট | ক্রেডিট | ডেবিট | ক্রেডিট | ডেবিট | ক্রেডিট | ডেবিট | ক্রেডিট | ডেবিট | ক্রেডিট | |
| হাতে নগদ | ||||||||||
| ব্যাংক জমার উদ্বৃত্ত | ||||||||||
| দেনাদার | ||||||||||
| প্রাপ্য বিল | ||||||||||
| ক্রয়ের বিপরীতে অগ্রীম | ||||||||||
| অগ্রীম বেতন | ||||||||||
| নিরাপত্তা জমানত | ||||||||||
| বিনিয়োগের প্রাপ্য সুদ | ||||||||||
| স্থায়ী আমানত | ||||||||||
| ষ্টক ও শেয়ারে বিনিয়োগ | ||||||||||
| বিনিয়োগ | ||||||||||
| সঞ্চয় পত্র | ||||||||||
| কর্মচারীকে ঋণ প্রদান | ||||||||||
| প্রাথমিক খরচ | ||||||||||
| সুনাম | ||||||||||
| ট্রেডমার্ক | ||||||||||
| মেশিন ও কলকব্জা | ||||||||||
| খুচরা যন্ত্রাংশ | ||||||||||
| আসবাবপত্র ও সরঞ্জাম | ||||||||||
| মটর গাড়ী | ||||||||||
| ভুমি ও দালান | ||||||||||
| ভুমি উন্নয়ন | ||||||||||
| ইজারা সম্পত্তি (-বছর) | ||||||||||
| নিস্কর সম্পত্তি | ||||||||||
| পাওনাদার | ||||||||||
| প্রদেয় বিল | ||||||||||
| জমাতিরিক্ত উত্তোলন | ||||||||||
| বন্ধকী ঋণ | ||||||||||
| বকেয়া মজুরী | ||||||||||
| বকেয়া বেতন | ||||||||||
| বকেয়া ভাড়া | ||||||||||
| বকেয়া বিদ্যুৎ বিল | ||||||||||
| ঋনের বকেয়া সুদ | ||||||||||
| বকেয়া কমিশন | ||||||||||
| বিক্রয় | ||||||||||
| সার্ভিস চার্জ | ||||||||||
| কমিশন প্রাপ্তি | ||||||||||
| সম্পত্তি বিক্রয়ের মুনাফা | ||||||||||
| বাট্টা প্রাপ্তি | ||||||||||
| চালানী কারবার হতে আয় | ||||||||||
| বিনিয়োগের মুনাফা/সুদ | ||||||||||
| ভাড়া প্রাপ্তি | ||||||||||
| লভ্যাংশ প্রাপ্তি | ||||||||||
| আমানতের সুদ | ||||||||||
| উত্তোলনের সুদ | ||||||||||
| অনাদায়ী পাওনা আদায় | ||||||||||
| বেতন | ||||||||||
| অফিস ভাড়া | ||||||||||
| প্রশাসনিক ব্যয় | ||||||||||
| মজুরী | ||||||||||
| জ্বালানী ও তাপ | ||||||||||
| আলো ও বিদ্যুৎ | ||||||||||
| জাহাজ ভাড়া | ||||||||||
| কারখানার ভাড়া | ||||||||||
| গুদাম ভাড়া | ||||||||||
| আমদানী শুল্ক | ||||||||||
| অন্ত:মূখী পরিবহণ | ||||||||||
| পণ্য খালাস খরচ | ||||||||||
| রপ্তানী শুল্ক | ||||||||||
| সুপারভাজারের বেতন | ||||||||||
| ডাক ও তার | ||||||||||
| টেলিফোন ও মোবাইল | ||||||||||
| মনিহারী | ||||||||||
| বিজ্ঞাপন | ||||||||||
| নিরীক্ষা ফি | ||||||||||
| প্রারম্ভিক মজুদ পণ্য | ||||||||||
| পণ্য ক্রয় | ||||||||||
| আইন খরচ | ||||||||||
| বিবিধ খরচ | ||||||||||
| ব্যবসায়িক ব্যয় | ||||||||||
| ব্যাংক চার্জ | ||||||||||
| মূলধনের সুদ | ||||||||||
| আপ্যায়ন খরচ | ||||||||||
| যাতায়ত ব্যয় | ||||||||||
| মেরামত ও নবায়ন | ||||||||||
| আয়কর | ||||||||||
| বিমা সেলামী | ||||||||||
| কমিশন প্রদান | ||||||||||
| নমূনা সরবরাহ | ||||||||||
| বাট্টা প্রদান | ||||||||||
| রয়্যালিটি | ||||||||||
| শিক্ষানবিশ ভাতা | ||||||||||
| মন্দ ঋণ | ||||||||||
| ব্যবসা উন্নয়ন ব্যয় | ||||||||||
| ঋনের সুদ | ||||||||||
| জমাতিরিক্ত উত্তোলনের সুদ | ||||||||||
| বিক্রয় পরিবহন | ||||||||||
| পরোক্ষ ব্যয় | ||||||||||
| মূলধন | ||||||||||
| মূলধন সঞ্চিতি | ||||||||||
| সাধারণ সঞ্চিতি | ||||||||||
| আয়কর সঞ্চিতি | ||||||||||
| বাট্টা সঞ্চিতি | ||||||||||
| অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি | ||||||||||
| অবন্টিত মুনাফা |
মৌলিক উদাহরণ (Key Example)
মিনহাজ করপোরেশন এর ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে সমাপ্ত অর্থ বছরের রেওয়ামিল নিম্নরুপ;
| বিবরণ | ডেবিট | বিবরণ | ক্রেডিট |
| বেতন | ১৪০,০০০ | মূলধন | ২০০,০০০ |
| অফিস ভাড়া | ৩০,০০০ | পাওনাদার | ৪০,০০০ |
| প্রশাসনিক ব্যয় | ১৫,০০০ | প্রদেয় বিল | ২১,৪০০ |
| মজুরী | ১২০,০০০ | ব্যাংক জমাতিরিক্ত উত্তোলন | ৬০,০০০ |
| আলো ও বিদ্যুৎ | ৮,০০০ | ৯% বন্ধকী ঋণ | ৮০,০০০ |
| জাহাজ ভাড়া | ১৮,০০০ | বকেয়া মজুরী | ১৫,০০০ |
| কারখানার ভাড়া | ৩০,০০০ | বকেয়া বেতন | ৫,০০০ |
| আমদানী শুল্ক | ৫,০০০ | বকেয়া ভাড়া | ৩,০০০ |
| অন্ত:মূখী পরিবহণ | ১২,০০০ | বকেয়া বিদ্যুৎ বিল | ৫,০০০ |
| টেলিফোন ও মোবাইল | ৪,০০০ | ঋনের বকেয়া সুদ | ৮,০০০ |
| মনিহারী | ৮,০০০ | বকেয়া কমিশন | ৫,০০০ |
| বিজ্ঞাপন | ৬,০০০ | কমিশন প্রাপ্তি | ৩,০০০ |
| নিরীক্ষা ফি | ৫,০০০ | সাধারণ সঞ্চিতি | ১৬,০০০ |
| প্রারম্ভিক মজুদ পণ্য | ৬১,০০০ | অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি | ১,০০০ |
| পণ্য ক্রয় | ৫৫০,০০০ | গ্রেচুইটি তহবিল | ১৫,০০০ |
| হাতে নগদ | ৭৫,০০০ | ক্রয় ফেরত | ১৬,০০০ |
| ব্যাংক জমার উদ্বৃত্ত | ২৫,০০০ | সম্পত্তি বিক্রয়ের মুনাফা | ৪,০০০ |
| দেনাদার | ৬০,০০০ | বিক্রয় | ১,২৩০,০০০ |
| প্রাপ্য বিল | ৩৫,০০০ | বাট্টা প্রাপ্তি | ৩,০০০ |
| উত্তোলন | ৮,০০০ | বিনিয়োগের মুনাফা/সুদ | ১,৬০০ |
| স্থায়ী আমানত | ৩০,০০০ | অগ্রীম ভাড়া | ৬,৩০০ |
| ব্যাংক চার্জ | ২০০ | ||
| মেরামত ও নবায়ন | ৬,৩০০ | ||
| বিমা সেলামী | ৩,৬০০ | ||
| কমিশন প্রদান | ৮,০০০ | ||
| বাট্টা প্রদান | ৪,৫০০ | ||
| মন্দ ঋণ/অনাদায়ী পাওনা | ৫,৮০০ | ||
| ব্যবসা উন্নয়ন ব্যয় | ১,৯০০ | ||
| ঋনের সুদ | ৯,০০০ | ||
| বিক্রয় পরিবহন | ৬,০০০ | ||
| ভ্যাট প্রদান | ৮,০০০ | ||
| ৮%বিনিয়োগ | ৮০,০০০ | ||
| সুনাম | ৫,০০০ | ||
| মেশিন ও কলকব্জা | ৮০,০০০ | ||
| খুচরা যন্ত্রাংশ | ৫,০০০ | ||
| আসবাবপত্র ও সরঞ্জাম | ১০,০০০ | ||
| মটর গাড়ী | ৬০,০০০ | ||
| ভবন ও দালান | ১০০,০০০ | ||
| বিক্রয় ফেরত | ১০০,০০০ | ||
| মোট | ১,৭৩৮,৩০০ | মোট | ১,৭৩৮,৩০০ |
নিম্নোক্ত বিষয় সমূহের সমন্বয় সাধন করতে হবে;
১. ৩১ শে ডিসেম্বর তারিখে সমাপনী মজুদের মোট পরিমাণ ছিল ১,৮৫,০০০ টাকা।
২. সমাপনী মজুদ মালের মূল্যায়নের আগে আগুনে পণ্য (কাচামাল) বিনষ্ট হয়েছে ১২,০০০ টাকা যা বিমাকৃত ছিল না।
৩. অলিখিত বকেয়া বেতন, ভাড়া ও বিদ্যৎ বিলের পরিমাণ যথাক্রমে ১০,০০০, ১৫,০০০ এবং ২,০০০ টকা।
৪. অগ্রীম মজুরী, বিমা সেলামীর পরিমাণ যথাক্রমে ১২,০০০ এবং ২,০০০ টাকা।
৫. দেনাদারের উপর সঞ্চিতি রাখতে হবে ৫%
৬. কমিশন অর্জিত হয়েছে তবে আদায় হয়নি ৩,৫০০ টাকা
৭. দালানের উপর ৫%, মেশিন ও যন্ত্রপাতি ও মটর গাড়ীর উপর ১০% আসবাবপত্রের উপর ২০% অবচয় আরোপ করতে হবে;
৮. আসবাব প্রত্র ও সরঞ্জাম পরিবহণ ও স্থাপন ব্যয় ৩,০০০ টাকা বিক্রয় পরিবহণের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে
৯. তিন বছর ব্যাপি প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন ব্যয় করা হয়েছে বিধায় উক্ত ব্যয় তিনবছর ব্যাপি অবলোপন করা হবে।
১০. একজন ক্রেতা কর্তৃক দায়েরকৃত ক্ষতিপূরণ মামলার বিপরীতে সম্ভাব্য দায়ের পরিমাণ ৩০,০০০ টাকা।
১১. ১০,০০০ টাকার বিক্রয় হিসাব হতে বাদ পরেছে।
১২. বন্ধকীঋণগ্রহণ করা হয় ১লা জানুয়ারী ২০১৬ তারিখে, যার মধ্যে কোন সুদ অন্তর্ভুক্ত নাই।
১৩. সময় উত্তীর্ণ হওয়ায় অগ্রীম ভাড়া ৩,৩০০ টাকা অর্জিত হয়েছে।
১৪. ৮% বিনিয়োগের এক বছরের সুদ পাওনা হয়েছে যা হিসাবভুক্ত হয়নি।
১৫. হাবিব এর নিকট হতে ২০,০০০ টাকার পণ্য বাকীতে ক্রয় করে বিক্রয় হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
১৬. হোসেন এর নিকট হতে ২৩,০০০ টাকার পণ্য ক্রয় করে ৩২,০০০ টাকা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
১৭. একজন পরিচালক কারবার হতে ২,০০০ হাজার টাকা মূল্যের পণ্যগ্রহণ করেছেন যা কর্মচারীদের পরিতোষিক ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
১৮. অব্যবহৃত মনিহারী রয়েছে ৪,০০০ টাকা
১৯. সেবা প্রদান করা হয়েছে কিন্তু বিল দাখিল করা হয়নি ১০,০০০ টাকা।
করনীয়
১. প্রয়োজনীয় সমন্বয় দাখিলা তৈরী কর।
২. একটি দশ ঘরা কার্যপত্র তৈরী কর।
৩. প্রয়োজনীয় সমাপনী দাখিলা তৈরী কর।
৪. যেখানে প্রয়োজন, বিপরীত দাখিলা তৈরী কর।
৫. শুদ্ধ রেওয়ামিল তৈরী করো
৬. আয় বিবরণী তৈরী করো
৭. উদ্বৃত্তপত্র তৈরী কর
৮. সমন্বয় দাখিলা সমূহ কার্যপত্রে পোষ্টিং দাও
৯. সমন্বয়সহ কার্যপত্রে সমন্বিত রেওয়ামিল দেখাও।
১০. একটি পূর্নাঙ্গ কার্যপত্র প্রস্তুত করে নিট আয় নির্ণয় কর এবং আর্থিক অবস্থা প্রদর্শন কর।
১১. আংশিক কার্যপত্রের মাধ্যমে সমন্বয় এবং সমন্বিত রেওয়ামিল প্রস্তুত করতে হবে।
১২. আয় সম্পর্কিত সমন্বয়গুলো চিহ্নিত কর।
১৩. সমাপনী দাখিলা তৈরী করে আয়-ব্যয় সংক্রান্ত হিসাবগুলো বদ্ধ কর।
১৪. স্বত্বাধিকারের পরিমাণ নির্ণয় কর
সমাধান
সমাধান দেখার জন্য নিচের পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করুন