উচ্চমাধ্যমিক হিসাববিজ্ঞান
ষষ্ঠঅধ্যায়
প্রাপ্য হিাসাবসমূহের হিসাবরক্ষন
Accounting for Receivables
প্রাপ্য হিসাব সম্পর্কে ধারণা
যখন কোন প্রতিষ্ঠান বাকিতে পণ্য বা সেবা বিক্রয় করে তখন প্রাপ্য হিসাবের সৃষ্টি হয়। প্রতিষ্ঠান বিক্রয়কৃত পণ্য সরবরাহ বা সেবাদেয়ার পর যদি তাৎক্ষনিকভাবে উক্ত পণ্য বা সেবার মূল্য নগদে আদায় করতে না পারে সেক্ষেত্রে ক্রেতা বা সেবার গ্রহীতাকে বাণিজ্যিকঋণ বা ধার দিয়েছে বলে গন্য হয়। এমতাবস্থায় বিক্রেতা তার হিসাব বইতে ক্রেতার নামে একটি হিসাব খুলে এবং তার সাথে সংঘটিত সকল লেনদেন যেমন, বাকিতে বিক্রয়, মূল্য আদায়, বাট্টা প্রদান, আনাদায়ী পাওনা অবলোপন ইত্যাদি এ হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। এরূপ বাকিতে ক্রয়কারী প্রত্যেক ক্রেতার নামে একটি করে হিসাব খোলা হয় এবং সকলের হিসাবকে একত্র করে একটি প্রাপ্য হিসাব খোলা হয়। এ হিসাব বা হিসাব সমূহই হলো প্রাপ্য হিসাব।
প্রাপ্য হিসাব সমূহ মেয়াদের ভিত্তিতে দু প্রকার
১. স্বল্প মেয়াদী বা চলতি প্রাপ্যাদি (Short Term or Current Receivable) । এ ধরণের প্রাপ্য সাধারণত হিসাব বর্ষের মধ্যে অর্থাৎ এক বছর সময়ের মধ্যে আদায়যোগ্য হয়।
২. দীর্ঘ মেয়াদী বা অ-চলতি প্রাপ্য হিসাব (Long Term or non-current Receivable): এ ধরণের প্রাপ্য সাধারণত হিসাব বর্ষের মধ্যে আদায় হয় না অর্থাৎ এক বছরের অধিক সময় পরে আদায়যোগ্য হয়।
প্রাপ্য নোট সমূহ দু ধরণের হয়
১. চাহিবামাত্র পরিশোধ যোগ্য (Demand Promissory Note)
২. নির্দিষ্ট সময়ে আদায় যোগ্য নোট (Notes Receivable with maturity date)
প্রাপ্য হিসাবেরস্বীকৃতি(Recognition of Accounts Receivable)
প্রাপ্য হিসাব সমূহ বাকিতে সেবা বা পণ্যের বিক্রয়ের সাথে সম্পর্কিত। যখন কোন সেবার বা পণ্যের বিক্রয় সম্পন্ন হয় এবং এর মূল্য পরবর্তীতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয় তখনই প্রাপ্য হিসাব সমূহ স্বীকৃত হয়।
উদাহরণ:
মেসার্স হাবিব এন্ড কোং ১লা জুলাই ১০০০ মিটার কাপড় এবং ২০০ পিস শার্ট নিম্নোক্ত শর্তে জহির এন্ড কোং নিকট প্রেরন করে;
কাপড়: প্রতি মিটার কাপরের মূল্য ১০০ টাকা, কাপড় ডেলিভারীর ১৫ দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধিত হবে।
তৈরী শার্ট: প্রতিটি শার্টের মূল্য ৫০০ টাকা, জহির এন্ড কোং প্রতি ৫০ পিস শার্ট বিক্রয় হওয়ার পর তিন দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করবে। উক্ত শার্ট ১৫ ই জুলাই তারিখ ৭০ টি, ৩১ শে জুলাই ১০০ টি এবং ১০ ই আগষ্টে অবশিষ্ট ৩০ বিক্রয় হয় ।
উপরোক্ত উদাহরণে হাবিব এন্ড কোং এর বিক্রিত কাপড়ের মালিকানা এবং ঝুকি পণ্য সরবরাহের সাথে সাথে জহির এন্ড কোং এর নিকট হস্থান্তরিত হয় এবং এর মূল প্রতি মিটার ১০০ টাকা হিসাবে ১০০,০০০ টাকা নিরূপণ করা যায়। সুতরাং ১লা জুলাই তারিখে উক্ত বিক্রয় এবং প্রাপ্য স্বীকৃত হবে এবং বিক্রয় মূল্য প্রাপ্য হিসাবে নিম্নোক্তভাবে হিসাবভুক্ত হবে।
| তরিখ | বিবরণ | ডেবিট | ক্রেডিট |
| ১লা জুলাই | প্রাপ্য হিসাব জহির এন্ড কোং | ১০০,০০০ | |
| বিক্রয় হিসাব | ১০০,০০০ |
প্রাপ্য হিসাব সমূহের মূল্যায়ন(Measurment/Valuation of Accounts Receivable)
প্রাপ্য হিসাব সমূহের স্বীকৃতি ও হিসাবভুক্তির পর কি পরিমাণ অর্থ প্রাপ্য হিসাব শিরোনামে আর্থিক বিবরণীতে প্রদর্শন করা হবে তা নিরূপণ করার জন্য প্রাপ্য হিসাব সমূহের মূল্যায়নের প্রয়োজন হয়।
সাধারণত নিম্নোক্ত দুটি পদ্ধতি অনাদায়ী পাওনার পরিমাণ প্রাক্কলন বা পরিমাপ করা হয়;
১. অনাদায়ী পাওনার প্রত্যেক্ষ অবলোপন পদ্ধতি
(Direct Writte-off Method for Uncollectible Accounts):
এ পদ্ধতিতে প্রথমত প্রাপ্য হিসাবের মধ্যে কি পরিমাণ অর্থ আদায়যোগ্য নয় তা চিহ্নিত করা হয়। এর জন্য দেনাদারের একটি তালিকা তৈরী করা হয় অত:পর প্রতিটি প্রাপ্য হিসাব পর্যালোচনা করে তার আদায় যোগ্যতা যাচাই করা হয়। যদি কোন দেনাদারের নিকট প্রাপ্য অর্থ সম্পূর্ন বা আংশিক আদায়যোগ্য নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়, উক্ত অনাদায়ী প্রাপ্যকে অনাদায়ী পাওনা হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং সরাসরি লাভ-লোকসান হিসাবে ব্যয় হিসাবে ডেবিট দিকে প্রদর্শন করা হয়। এ পদ্ধতিতে অনাদায়ী পাওনা বা মন্দ ঋণকে প্রকৃত ক্ষতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ফলে এটি একদিকে লাভ-লোকসান হিসাবে ক্ষতিরূপে প্রদর্শন করা হয় এবং উদ্বৃত্তপত্রে প্রাপ্য হিসাব নামক সম্পদ হতে বাদ দিয়ে হ্রাসকৃত সম্পদ দেখানো হয়।
উদাহরণ: মেসার্স হাবিব এন্ড কোং ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখে সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে প্রাপ্য হিসাবের বয়স ভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করেছে। উক্ত তালিকায় দেখা যায় তাদের মোট ২৩ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট মোট ১০,২০,০০০ টাকা প্রাপ্য রয়েছে,এর মধ্যে দুইজন দেনাদারের উদ্বৃত্ত মোট ১০,০০০ টাকা প্রায় পাচ বছর হতে জের টেনে আসছে যার আদায় খরচ উক্ত টাকা হতে বেশী হবে বিধায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এবং এ বছরের শুরুতে দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০০,০০০ টাকা পাওনা রয়েছে যার সম্পদ হতে ৫০% পাওয়া যাবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
এমতাবস্থায় মেসার্স হাবিব এন্ড কোং ১,১০,০০০ (২০০০০০x৫০%=১০০,০০০+১০,০০০) টাকা আদায়যোগ্য নয় বলে প্রতীয়মান হওয়ায় অনাদায়ী পাওনা হিসাবে লাভ-লোকসান হিসাবে ক্ষতি হিসেবে প্রদর্শন করবে এবং উদ্বৃত্ত পত্রে প্রাপ্য হিসাবের উদ্বৃত্ত হতে উক্ত টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অংশ ৯,১০,০০০ টাকা উদ্বৃত্ত পত্রে প্রদর্শন করবে।
অনাদায়ী পাওনার প্রত্যেক্ষ অবলোপন পদ্ধতিতে যখন কোন পাওনা আদায় হবে না মর্মে নিশ্চিত হওয়া যায় তখনই কেবল উক্ত ক্ষতি লাভ-লোকসান হিসাবে দেখানো হয়। ফলে হঠাৎ কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থায় নাটকীয় পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
হিসাব পদ্ধতি:
অনাদায়ী পাওনার প্রত্যেক্ষ অবলোপন পদ্ধতিতে উপরোক্ত দেউলিয়া ঘোষিত অনাদায়ী
পাওনা নিম্নোক্তভাবে হিসাবভুক্ত হবে;
| তরিখ | বিবরণ | ডেবিট | ক্রেডিট |
| ৩১/12/১৬ | অনাদায়ী পাওনা | ১০০,০০০ | |
| প্রাপ্য হিসাব | ১০০,০০০ |
অনাদায়ী পাওনার ভাতা বা সঞ্চিতি পদ্ধতি
(Allowance or Provision Method of Uncollectable Accounts)
এ পদ্ধতিতে প্রত্যেক বছর শেষে অনাদায়ী পাওনার সম্ভাব্য পরিমাণ প্রাক্কলন (ঊংঃরসধঃব) করা হয় এবং উক্ত পরিমাণ অর্থ চলতি বছরের ক্ষতি গন্য করে লাভ-লোকসান হিসাবের ব্যয় দিকে দেখানো হয় এবং উদ্বৃত্ত পত্রে দেনাদার হতে বাদ দিয়ে দেখানোর পরিবর্তে দায় দিকে দেখানো হয়। ভবিষৎ সময়ে যখন অনাদায়ী পাওনার পরিমাণ নিশ্চিত হয় তখন অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতির উক্ত অনাদায়ী পাওনা খাতে ক্ষতি সমন্বয় করা হয়
এ পদ্ধতিতে হিসাবের ধরন হবে নিম্নরূপ;
যখন অনাদায়ী পাওনার সম্ভাব্য পরিমাণ প্রাক্কলন (ঊংঃরসধঃব) করা হয়
| তারিখ | বিবরণ | ডেবিট | ক্রেডিট |
| ৩১ ডিসেম্বর | অনাদায়ী পাওনা ব্যয় | *** | |
| অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি | *** |
যখন অনাদায়ী পাওনার পরিমাণ নিশ্চিত হয়
| তারিখ | বিবরণ | ডেবিট | ক্রেডিট |
| ৩১ ডিসেম্বর | অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি | *** | |
| প্রাপ্য হিসাব | *** |
১. আনাদায়ীপাওনা ও সন্দেহজনক পাওনার সংজ্ঞা
আনাদায়ী পাওনা: প্রাপ্য হিাসাবের যে টাকা আদায়যোগ্য নয় বলে প্রতীয়মান হয় তাই হলো অনাদায়ী পাওনা বা মন্দ ঋণ।
সন্দেহজনক পাওনা:
যখন এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যাতে কোন নির্দিষ্ট পাওনা আদায়ের বিষয়ে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি হয় অথচ অদায় হওয়া বা না হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না তখন ঐ সকল পাওনাকে সন্দেহজনক পাওনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি বা সন্দেহজনকপাওনা সঞ্চিতি
সঞ্চিতি বলতে ভবিষ্যতে কোন সম্ভাব্য ক্ষতির হাত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আর্থিক ব্যবস্থা রাখা বা কিছু সঞ্চয় করে রাখা বুঝায়। ব্যবসায়ীগন তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে নির্ধারিত হারে বাকিতে বিক্রয়ের একটি অংশ ভবিষ্যতে অনাদায় জনিত ক্ষতি কমানোর জন্য মুনাফা হতে সংরক্ষণ করে।
অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি এবং সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতির পরিমাণ প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে সাধারণত নিম্নোক্তপ্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয়;
১. প্রাপ্য হিসাবের উদ্বৃত্তের উপর নির্দিষ্ট হার
এ প্রক্রিয়ায় হিসাব বছরের শেষদিনে প্রাপ্য হিসাবের উদ্বৃত্তেরউপর কোন একটি নির্ধারিত হারে সঞ্চিতি রাখা হয়। উক্ত হার কত হবে তা নির্ভর করে ব্যবসা প্রকৃতি, দেনাদারদের লেনদেনের অভ্যাস ইত্যাদির উপর।
২. সময় ভিত্তিক বিশ্লেষন
অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি এবং সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতির পরিমাণ আরও সঠিকভাবে প্রাক্কলনের জন্য হিসাব বিবরণী প্রস্তুতকালে দেনাদারদের বয়স (অমব) ভিত্তিক একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। উক্ত তালিকাতে সাধারণত তিন মাসেরে কম, তিন মাস হতে ছয় মাস, ছয় মাস হতে এক বছর, এক বছর হতে দু বছর, দুবছর হতে তিন বছর এবং তিন বছরের বেশী সময় থেকে পাওনা অনাদায়ী রয়েছে এমন সময় ভিত্তিতে দেনাদারদের বিন্যস্ত করা হয়। অত:পর বিভিন্নœ শ্রেণীর জন্য আলাদা হার প্রয়োগ করে অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি এবং সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতির পরিমাণনিরূপণ করা হয়। যে পাওনা যত বেশী সময় ধরে অনাদায়ী রয়েছে তার আদায় হওয়ার সম্ভাবনা ততকম। সে অনুসারে কম সময় অনাদায়ী পাওনার বিপরীতে কম হারে এবং বেশী সময় হতে অনাদায়ী পাওনার বিপরীতে বেশী হারে সঞ্চিতি রাখা হয়।
উদাহরণ:
অবুজর ট্রেডিং একটি পাইকারী ঔষধ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে তাদের প্রাপ্য হিসাবের বা দেনাদারের উদ্বৃত্ত ছিল ২০,০০,০০০ টাকা। পরিশোধ যোগ্য তারিখ হতে যাদের বয়স, সঞ্চিতির হার এবং সঞ্চিতির পরিমাণহবে নিম্নরূপ;
| দেনাদারের নাম | মোট প্রাপ্য | মেয়াদ উত্তীর্নের সময় | |||||
| ৩ মাসের কম | ৩-৬ মাস | ৬-১২মাস | ১-২ বছর | ২-৩বছর | ৩ বছরের বেশী | ||
| কবির | ৫০০,০০০ | ৫০০,০০০ | |||||
| ছগির | ২৫০,০০০ | ২৫০,০০০ | |||||
| হাসেম | ৩০০,০০০ | ৩০০,০০০ | |||||
| কাসেম | ১০৫,০০০ | ১০৫,০০০ | |||||
| শাজাহান | ২৮০,০০০ | ২৮০,০০০ | |||||
| জাকির | ১৪০,০০০ | ১৪০,০০০ | |||||
| হারেস | ১৬০,০০০ | ১৬০,০০০ | |||||
| সবুজ | ৫৫,০০০ | ৫৫,০০০ | |||||
| হারাদন | ২১০,০০০ | ২১০,০০০ | |||||
| মোট | ২০,০০,০০০ | ৭৫০,০০০ | ৪০৫,০০০ | ২৮০,০০০ | ১৪০,০০০ | ২১৫,০০০ | ২১০,০০০ |
| সঞ্চিতির হার | – | ১.০০% | ২.০০% | ৩.০০% | ১০% | ২০% | ৫০% |
| সঞ্চিতির পরিমাণ | ১৮৬,০০০ | ৭,৫০০ | ৮,১০০ | ৮,৪০০ | ১৪,০০০ | ৪৩,০০০ | ১০৫,০০০ |
অনাদায়ী পাওনা আদায়
দেনাদারের যে টাকা আদায়যোগ্য নয় বলে প্রতীয়মান হয় তাই হলো অনাদায়ী পাওনা বা মন্দ ঋণ(ইধফ ফবনঃং)। একইভাবে প্রাপ্য নোট কোন কারণে অনাদায়ী হলেও অনাদায়ী পাওনা বা মন্দ ঋণ সৃষ্টি হয় এবং তাও অনাদায়ী পাওনার অন্তর্ভুক্ত হয়। কোন পাওনাকে তখনই মন্দ ঋণ বলা হয় যখন সার্বিক বিষয় বিবেচনায় উক্ত ঋণ আদায় না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরূপ প্রাপ্য অর্থ আদায় না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর উক্ত অর্থকে ক্ষতি বিবেচনা করে আয় ব্যয় হিসাবে ডেবিট দিকে ব্যয় বা ক্ষতি হিসেবে দেখানো হয়। তবে এটি করা হয় হিসাবকে হালনাগাদ রাখার জন্য। কোন প্রাপ্য অর্থকে ক্ষতি হিসাবে আয় ব্যয় হিসাবে প্রদর্শন করা হলেও উক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে কারবারের অধিকার রহিত হয় না। লিমিটেশন এক্ট অনুসারে কোন পাওনা দাবী করার সময় উত্তীর্ণ না হলে উক্ত প্রতিষ্ঠান পাওনা আদায়ের জন্য আইনগত ব্যবস্থাসহ বিভিন্নœ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। ফলে কখনো কখনো অনাদায়ী পাওনা হিসাবে অবলোপন করা দেনাদারের অর্থ আদায় হতে পারে। যখন এরূপ কোন অর্থ আদায় হয় তখন তা হিসাবভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ক. প্রাপ্য নোট (Note Receivable)প্রাপ্য নোট হলো নির্দিষ্টপরিমাণ অর্থ নির্দিষ্ট তারিখে বা নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধের জন্য একটি লিখিত শর্তহীন প্রতিশ্রুতি। এটি দেনাদার পাওনাদারের অনুকুলে প্রদান করে থাকে। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি হস্তান্তর যোগ্য অর্থাৎ এর প্রাপক এর মূল্য গ্রহণের জন্য তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে এর মালিক বানাতে পারে বা ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। সে ক্ষেত্রে উক্ত নোটে প্রতিশ্রুতি দাতা উক্ত তৃতীয় পক্ষকে নোটের অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকে।উহা ধারকের উদ্বৃত্ত পত্রে সম্পদ হিসাবে দেখানো হয়।
প্রাপ্য নোটের হিসাব রক্ষনের ক্ষেত্রে পাচটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় রয়েছে,
১. মেয়াদ পূর্তির তারিখ নিরূপণ (Derermining the maturity date)
২. সুদ নিরূপণ (Computing interest)
৩. প্রাপ্য নোট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া( Recognizing notes receivable)
৪. প্রাপ্য নোটের মূল্যায়ন (Valuing notes receivable)
৫. প্রাপ্য নোটের মীমাংশা করা/ হস্তান্তর করা/ সমাপন
(Disposing of notes receivable)
মেয়াদ পূর্তির তারিখ নিরূপণ
প্রাপ্য নোটের পরিশোধ্য তারিখ সাধারণত তিন ভাবে লিখা হয়। ১) চাহিবা মাত্র পরিশোধ্য (চধুধনষব ঙহ ফবসধহফ), কোন নির্দিষ্ট তারিখে পরিশোধ্য (চধুধনষব রহ ধ ংঢ়বপরভরবফ ফধফব) এবং কোন নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদ অতিক্রান্তের পর পরিশোধ্য (অঃ ঃযব বহফ ড়ভ ধ ংঢ়বপরভরবফ ঢ়বৎরড়ফ ড়ভ ঃরসব)।
চাহিবামাত্র পরিশোধ যোগ্য নোটের ক্ষেত্রে পরিশোধ্য সময় নিরূপণের প্রয়োজন হয় না, কারণ এটি তাৎক্ষনিকভাবে পরিশোধযোগ্য। একই ভাবে নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ থাকলেও পরিশোধ্য সময় নোটের মধ্যেই উল্লেখ থাকে বিধায় এটি পুনরায় নিরূপণের প্রয়োজন হয় না। তবে যখন কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ দিন বা মাসে উল্লেখ করা হয় তখন দিন বা মাস বা বছর গননা করে এর পরিশোধ্য সময় নিরূপণ করতে হয়। উদাহরণ স্বরুপ ১লা জানুয়ারী তারিখে প্রস্তুত একটি তিন মাস মেয়াদী নোট এর পরিশোধ্য তারিখ হবে ১লা এপ্রিল। তবে যদি এটি জানুয়ারী মাসের ৩১ তারিখে প্রস্তুত করা হতো তবে এর পরিশোধ্য তারিখ হতো ৩০ই এপ্রিল। অর্থাৎ যখন মেয়াদ মাসের দ্বারা উল্লেখ করা হয় তখন প্রস্তুত করার তারিখ হতে মাস গননা করে তারিখ নির্ধারিত হবে। আবার যখন মেয়াদ দিন ভিত্তিতে উল্লেখ করা হয় তখন দিন গননা করে এর পরিশোধ্য তারিখ নিরূপণ করতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে নোট প্রস্তুতের তারিখ বাদ দিয়ে গননা করা হয়। উদাহরণ স্বরুপ ১লা জানুয়ারী তারিখে প্রস্তুত একটি ৬০দিন মেয়াদী নোট এর পরিশোধ্য তারিখ হবে ২ রা মার্চ (প্রথম দিন বাদ দিয়ে জানুয়ারী মাসের ৩০ দিন + ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮ দিন +মার্চ মাসের ২ দিন) এর সাথে ৩ দিন অনুগ্রহ দিবস/অতিরিক্ত সময়(এৎধপব ঢ়বৎরড়ফ) যুক্ত হবে। সুতরাং অনুগ্রহ দিবস সহ পরিশোধ্য তারিখ হবে ৫ই মার্চ।
সুদ নিরূপণ
প্রাপ্য নোটের মধ্যে কখনো কখনো সুদের হার লিখিত থাকে আবার কখনো কখনো কোন সুদ উল্লেখ থাকে না। যে ক্ষেত্রে সুদের হার উল্লেখ থাকে সে ক্ষেত্রে উহার প্রস্তুতের বা ইস্যূর তারিখ বাদ দিয়ে পারিশোধ তারিখ সহ সময়ের জন্য সুদ নিরূপণ ও পরিশোধ করতে হয়। সাধারণত সুদের বার্ষিক হার লিখিত থাকে। যেক্ষেত্রে মাস ভিত্তিক মেয়াদ লিখিত থাকে সেক্ষেত্রে মাস অনুসারে এবং যখন দিন উল্লেখ থাকে তখন দিন গননা করে সুদ প্রদান করতে হয়। উল্লেখ্য সুদ গননার সময় নোট প্রস্তুতের দিন বাদ দিতে হয় তবে পরিশোধ্য দিন বা তারিখের সুদ প্রদান করা হয়। মাস ভিত্তিক গননার ক্ষেত্রে বছরে ১২ মাস এবং দিন ভিত্তিক গননার ক্ষেত্রে বছরে ৩৬০ দিন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বছরে ৩৬৫ দিন ধরা হয়।
সুদ গননার ক্ষেত্রে নিম্নোক্তছক অনুসরণ করা যায়;
| নোটের শর্ত (Terms of Note) | সুদ গননা (Calculation) | সুদের পরিমাণ |
| ৫০০,০০০, ১৪%, ৯০ দিন * | (৫০০,০০০ x১৪%) x (৯০/৩৬০) | ১৭,৫০০ |
| ৫০০,০০০, ১৪%, ৬ মাস | (৫০০,০০০x১৪%) x (৬/১২) | ৩৫,০০০ |
| ৫০০,০০০, ১৪%, ১ বছর | (৫০০,০০০x১৪%) x (১/১) | ৭০,০০০ |
* ৫০০,০০০ টাকার প্রাপ্য নোট যার মেয়াদ ৯০ দিন এবং সুদ হার বার্ষিক ১৪%। উল্লেখ্য কখনো কখনো বছরে ৩৬৫ দিন ধরে সুদ হিসাব করা হয়, সে ক্ষেত্রে ৩৬০ এর পরিবর্তে ৩৬৫ লিখতে হবে।
খ. প্রাপ্য নোটের অনুমোদন, নবায়ন, বাট্টাকরণ ও নিরস্তকরণ
নোটের নবায়ন:
নোটের নবায়ন বলতে কোন একটি প্রাপ্য নোটের মেয়াদ পূর্তিতে উহার মূল্য পরিশোধের পরিবর্তে প্রাপকের সম্মতি সাপেক্ষেনতুন মেয়াদের জন্য আরও একটি প্রাপ্য নোট ইস্যূ করা বুঝায়।
নোটের বাট্টাকরণ
প্রাপ্য নোট পরিশোধের জন্য সাধারণত মেয়াদ উল্লেখ থাকে। উক্ত মেয়াদ পূর্ণ হলে নোটের ধারক প্রাপ্য অর্থ আদায় করার অধিকারী হয়।কখনো কখনো নোটের মেয়াদ পূর্তির পূর্বেই ধারকের নগদ অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। নগদ অর্থের প্রয়োজনে ধারক উক্ত প্রাপ্য নোট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রয় করে দিয়ে থাকে। সধারণত নোটের অভিহিত মূল্য(ঋধপব ঠধষঁব) অপেক্ষা কম মূল্যে নোট বিক্রয় করা হয়। মেয়াদ পূর্তির আগে কোন প্রাপ্য বিল বা প্রাপ্য নোটউহার অভিহিত মুল্য (ঋধপব ঠধষঁব) অপেক্ষা কম মূল্যে নোট বিক্রয় করাকে নোটের বাট্টাকরণ (উরংপড়ঁহঃরহম ড়ভ ঘড়ঃব) বলা হয়। বিলের মেয়াদপূর্তিতে নোট স্বীকৃতিদাতা বা প্রদানকারীর নিকট হতে নোটের ক্রেতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থ মূল্য আদায় করে। কোন কারণে নোটের ক্রেতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থ মূল্য আদায় করতে ব্যর্থ হলে নোটের ধারক অর্থাৎ যে পক্ষ বা যিনি নোট বিক্রয় করে অর্থ গ্রহণ করেছেন, তাকে নোটের পূর্ণমূল্য অর্থাৎঅভিহিত মূল্য (ঋধপব ঠধষঁব)ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করতে হয়। তবে ধারক পরবর্তীতে নোটের প্রদানকারীর নিকট হতে অর্থ আদায় করে থাকে।
নোটের নিরস্তকরণ
নোটের মেয়াদপূর্তির পূর্বে কখনো কখনো বিলের বা নোটের স্বীকৃতিকারী এবং নোটের ধারক উভয়ের সম্মতিতে অভিহিত মূল্য অপেক্ষা কম মূল্যে নোটের নিস্পত্তি করে থাকে। উভয়ের সম্মতিতে মেয়াদপূর্তির আগে অভিহিত মূল্য অপেক্ষা কম মূল্যে নোটের নিস্পত্তি করাকে নোটের নিরস্তকরণ বলে। অভিহিত মূল্য অপেক্ষা যে পরিমাণ অর্থ কম নেয়া হয় তাকে রিবেট বলা হয়।
প্রাপ্য নোট মর্যাদা
প্রাপ্য নোটের মর্যাদা বলতে এর মেয়াদপূর্তিতে পূর্ণ মূল্য পরিশোধিত হওয়াকে বুঝায়। যে ক্ষেত্রে প্রাপ্য নোটের সাথে সুদ পরিশোধের শর্ত থাকে, সে ক্ষেত্রে নোটের অভিহিত মূল্য এবং সুদ উভয় অর্থ পরিশোধিত হলে প্রাপ্য নোট মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়।
প্রাপ্য নোট অমর্যাদা
প্রাপ্য নোটের অমর্যাদা হলোপ্রাপ্য নোটের মর্যাদার বিপরীত। অর্থাৎ যখন মেয়াদপূর্তিতে পূর্ণ মূল্য পরিশোধিত না হয়ে ফেরত আসে তাকে প্রাপ্য নোটের অমর্যাদা বলে
প্রাপ্য হিসাব বিক্রয়
প্রাপ্য হিসাবের বিক্রয়কে ফেক্টরিং-ও বলা হয়। প্রাপ্য হিসাবের বিক্রয় বা ফেক্টরিং বলতে বাকিতে বিক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে আদায়ের পরিবর্তে তাৎক্ষনিক ভাবে আদায়ের জন্য বিক্রয়ের ইনভয়েস কোন কালেক্টিং এজেন্ট এর নিকট হস্তান্তর করে মূল্য গ্রহণকে বুঝায়। এটি স্বল্প মেয়াদে নগদ প্রবাহ বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া।
বাট্টা ও উহার প্রকার প্রকরণ
বাট্টা প্রধানত দুই প্রকার
১. নগদ বাট্টা(Cash Discount) এবং
২. বাণিজ্যিকবাট্টা (Trade Discount)
নগদ বাট্টা
দেনাদারের নিকট হতে প্রাপ্য অর্থ তড়িৎ আদায়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধের শর্তে প্রাপ্য টাকার উপর যে বাট্টা প্রদান করা হয় তাকেই বলা হয় নগদ বাট্টা।
বাণিজ্যিকবাট্টা
বাণিজ্যিকবাট্টাপণ্যের মূল্য তালিকার উপর ঘোষনা করা হয়। সাধারণত বিক্রয় বৃদ্ধি বা ক্রেতা আকৃষ্ট করার জন্য এ ধরণের বাট্টা ঘোষনা করা হয়। এ ধরণেরবাট্টাপণ্য মূল্যের উপর পার্সেন্টেজ আকারে ঘোষনা করা হয় বা প্রদান করা হয়। নগদ এবং বাকিতে উভয় প্রকারবিক্রয়ের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিকবাট্টা ঘোষনা করা হতে পারে। পণ্য মূল্য হতে বাট্টার পরিমাণ বাদ দিয়ে নিট মূল্য গ্রহণ করা হয় বিধায় নগদান বইয়ের বাট্টার ঘড়ে উক্ত বাট্টা দেখানো হয় না।
বাট্টা সঞ্চিতি ও উহার নিরূপণ ও হিসাব পদ্ধতি
বাট্টা সঞ্চিতি
কোন বছর শেষে দেনাদারের যে উদ্বৃত্ত থাকে তার উপর পরবর্তী বছরে সম্ভাব্য যে পরিমাণ নগদবাট্টা দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে তা সংস্থানের জন্য যে প্রভিশন বা সংস্থান রাখা হয় তাই হলে বাট্টা সঞ্চিতি।
বাট্টা সঞ্চিতির নিরূপণ প্রক্রিয়া
বাট্টা সঞ্চিতি নিরূপণ প্রক্রিয়া কুঋণ ও সন্দেহ জনক পাওনা সঞ্চিতির অনুরূপ।বাট্টা সঞ্চিতি নিরূপণের জন্য মোট দেনাদারের পরিমাণ এবং উহাদের বিক্রয় শর্ত বিবেচনা করা হয় এবং উক্ত দেনাদারের উপর পরবর্তী বছরে কি পরিমাণবাট্টা মঞ্জুর করার প্রয়োজন হতে পারে তা প্রাক্কলন করা হয় এবং উক্ত প্রাক্কলিত পরিমাণ টাকা বাট্টা সঞ্চিতি হিসাবে রাখা হয়। উক্ত বাট্টা বর্তমান বছরের ব্যয় হওয়ায় উক্ত বাট্টা লাভ-লোকসান হিসাবে ব্যয় হিসাবে দেখানো হয়। পরবর্তী বছরে বাট্টা প্রদান করা হলে উহা পরবর্তী বছরে ব্যয় হিসাবে দেখানো হয় না বরং বাট্টা সঞ্চিতি ডেবিট করা হয়।
বাট্টা সঞ্চিতির হিসাব পদ্ধতি
যখন বাট্টা সঞ্চিতি লিপিবদ্ধ করা হয়
| বিবরণ . | খ.পৃ | ডেবিট | ক্রেডিট |
| লাভ-লোকসান হিসাব | *** | ||
| বাট্টা সঞ্চিতি | *** |
যখন বাট্টা প্রদান করা হয়
| বিবরণ . | খ.পৃ | ডেবিট | ক্রেডিট |
| বাট্টা সঞ্চিতি | *** | ||
| মঞ্জুরীকৃত বাট্টা হিসাব | *** |
বিক্রয় শর্ত
বিক্রেতা পণ্য বিক্রয়কালে মূল্য পরিশোধের বিষয়ে যে শর্ত আরোপ করে তাই হলো বিক্রয় শর্ত। বিক্রয় শর্ত বাকিতে পণ্য বিক্রয়ের সাথে সম্পর্কিত। ক্রেতা পণ্য মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে কোন সময়য়ের মধ্যে পরিশোধ করলে মূল্য বিষয়ে কি ধরণের সুবিধা পাবে তা এ শর্তে নির্দেশ করা থাকে। যেমন একটি বহুল ব্যবহৃত বিক্রয় শর্ত হলো:৩/১৫; নিট ৪৫। এ শর্ত দ্বারা নির্দেশ করে ক্রেতা ১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করলে মোট মূল্যের উপর ৩% রিবেট বা বাট্টা পাবে তবে মূল্য পরিশোধের সর্বোচ্চ সময় ৪৫ দিন। ১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা না হলে কোন বাট্টা প্রদান করা হবে না এবং মূল্য পরিশোধের জন্য সময় পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন। উল্লেখ্য উক্ত ৪৫ দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধ না করলে বিক্রেতা প্রচলিত হারে সুদ আরোপ করতে পারে।
মৌলিক উদাহরণ-১
আব্দুল্লাহ গার্মেন্টস একটি শিশু পোষাক প্রস্তুত কারক ও পাইকারী বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের মোট বিক্রয়ের প্রায় ৮০% বিভিন্নœ মেয়াদে বাকিতে বিক্রয় করে। ডিসেম্বর২০১৪ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর তারিখে প্রাপ্য হিসাবের মোট উদ্বৃত্ত ছিল ২০,০০,০০০ টাকা। দেনাদারদের মধ্যে কবির নামক একজন ২০,০০০ টাকার পণ্য প্রতারণার মাধ্যমে বাকিতে ক্রয় সুবিধা গ্রহণ করেছে যাকে বর্তমানে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না, যা আদায়যোগ্য নয় বলে সাব্যস্ত হয়েছে।চলতি বছরে দেনাদারদের উপর আনাদায়ী এবং সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতি ৫%হারে ধরা হয় । ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩তারিখের হিসাবে কোন অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি রাখা হয়নি তবে প্রদেয় বাট্টা সঞ্চিতির পরিমাণ ছিল ১০,০০০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতি ছাড়াও ২% হারে বাট্টা সঞ্চিতি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০১৫ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর তারিখে সমাপ্ত আয় বছরে মোট বাকিতে বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ৩০,০০,০০০ টাকা এবং প্রাপ্য হিসাব হতে আদায় হয়েছে ২৭,০০,০০০ টাকা। ২০১৪ সালের দেনাদারেরঅন্তর্ভুক্ত৪০,০০০ টাকার একজন দেনাদার দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছে যার সম্পদ হতে ২৫% পর্যন্ত পাওয়া যাবে এবং অপর একজন দেনাদার ৬০,০০০ টাকা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যথাযথ দলিলাদির অভাবে যার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বিধায় তা অবলোপন করতে হবে। ২৫,০০০ টাকার একজন দেনাদার প্রায় দুই বছর হতে এবং ৩৮,০০০ টাকার একজন দেনাদার তিন বছরের বেশী সময় ধরে কোন লেনদেন করছে না। চলতি বছর হতে নির্দিষ্ট হারে অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি রাখার পরিবর্তে প্রাপ্য হিসাবের বয়সানুপাতে সঞ্চিতি রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং এক মাসের কম সময়ের জন্য ১%, তিন মাসের কম হলে ২%, ছয় মাসের কম হলে ৩%, এক বছরের কম হলে ৪%, দুই বছর পর্যন্ত ২০% এবং দুই বছরের বেশী হলে ৪০%, তিন বছরের বেশী হলে ৬০% সঞ্চিতি রাখতে হবে। সে মোতাবেক প্রাপ্য হিসাবের বয়স পর্যালোচনায় নিম্নোক্ত অবস্থা পরিলক্ষিত হয়।
| বয়স | ১ মাস পর্যন্ত | ১-৩ মাস | ৩-৬ মাস | ৬-১২মাস | ১-২ বছর | ২-৩ বছর | > ৩ | মোট |
| পাওনার পরিমাণ | ১০,০০,০০০ | ৩০০,০০০ | ২০০,০০০ | ৩৫০,০০০ | ৩৬৭,০০০ | ২৫,০০০ | ৩৮,০০০ | ২২৮০,০০০ |
একজন দেনাদার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করে ৬,০০০ টাকা বাট্টা সুবিধা গ্রহণ করেছে। এ বছরও ২% হারে বাট্টা সঞ্চিতি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পূর্ববর্তী বছরের অনাদায়ী পাওনার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৬ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর তারিখে সমাপ্ত আয় বছরে কর্তৃপক্ষ প্রাপ্য হিসাব ব্যবস্থাপনায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যেমন বকিতে বিক্রয় নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে নগদ মূল্যের উপর কারবারী বাট্টা(ঞৎধফব উরংপড়ঁহঃ) প্রদান করা, নগদ বাট্টা রহিত করা, প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে বকেয়া সুবিধা দেয়া এবং যথাসময়ে পরিশোধের জন্য ক্রেডিট লিমিট বৃদ্ধি করা আর ব্যর্থতায় অনতিবিলম্ভে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। এ প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর তারিখে মোট দেনাদারের পরিমাণ দাড়ায় ১৮,০০,০০০ টাকা, যার মধ্যে ২৫,০০০ টাকার একজন দেনাদার আদায়যোগ্য কোন সম্পদ না রেখে মৃত্যু বরণ করেছে বিধায় মওকুফ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।২০১৪ সালের একজন দেনাদার ৬০,০০০ টাকা পরিশোধ করেছে, যা গত বছর অনাদায়ী পাওনা হিসাবে অবলোপন করা হয়েছিল। মোট দেনাদারের উপর ৩% হারে অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি রাখতে হবে। বাট্টা সঞ্চিতি রাখার প্রয়োজন নাই।
করণীয়: প্রত্যোক বছরের জন্য আলাদাভাবে
১. অনাদায়ী পাওনার পরিমাণ বাহির করো
২. অনাদায়ী এবং সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতির পরিমাণ বাহির করো
৩. অনাদায়ী পাওনা খাতে ব্যয়ের পরিমাণ বাহির করো
৪. অনাদায়ী পাওনা, অনাদায়ী এবং সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতির জাবেদা দাখিলা দেখাও
৫. অনাদায়ী পাওনা, অনাদায়ী এবং সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতির খতিয়ান প্রদর্শন করো
৬. অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি এবং সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতির উদ্বৃত্ত নির্ণয় কর
৭. অনাদায়ী পাওনা আদায় এবং অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতির উদ্বৃত্ত সমন্বয়ের জন্য জাবেদা দেখাও
৮. প্রাপ্য টাকার বকেয়া সময়ের ভিত্তিতে অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতির পরিমাণ নির্ণয় কর
৯. নতুন প্রদেয় বাট্টা সঞ্চিতির পরিমাণ নির্ণয় কর
১০. বাট্টা খরচ হিসাব প্রস্তুত কর
১১. প্রদেয় বাট্রা সঞ্চিতি হিসাব এবং আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রস্তুত কর
১২. দেনাদারের নীট পরিমাণ দেখাও
১৩. বিশদ আয় বিবরণী তৈরী কর/আয় সারসংক্ষেপ দেখাও
১৪. আর্থিক অবস্থার বিবরণী দেখাও
১৫. অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি অপরিবর্তিত রাখা হবে ধরে প্রয়োজনীয় জাবেদা দেখাও (২০১৫ সালে)
১৬. অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি হিসাবের সমাপনী উদ্বৃত্ত ৫০০০ টাকায় হ্রাস করতে হবে মর্মে জাবেদা দেখাও
সমাধান
সমাধান দেখার জন্য নিচের পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করুন