Wednesday, November 5
Home>>Uncategorized>>Chapter-5: Accounting Principles (হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা)
Uncategorized

Chapter-5: Accounting Principles (হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা)

উচ্চমাধ্যমিক হিসাববিজ্ঞান

পঞ্চম অধ্যায়

হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা

Principles of Accounting

হিসাব বিজ্ঞানের ধারণা, অনুমান, রীতিনীতি

সাধারণ অর্থে নীতি শব্দটি দ্বারা কোন কাজ সস্পাদন ও আচার-আচরনের বিধিবিধান, নিয়মাচার বা সত্য ও ন্যায় সঙ্গত ভিত্তিকে নির্দেশ করে । হিসাব বিজ্ঞানে হিসাব সংরক্ষণ, বিবরণী প্রস্তুত ও উপস্থাপনের বিষয়ে এমন কোন চিরন্তন সত্য নিয়মাচার, বিধিবিধান বা ভিত্তি নাই। তবে হিসাব তথ্যকে সকলের নিকট বোধগম্য করার উদ্দেশ্যে হিসাব বিবরণী প্রস্তুতের ক্ষেত্রে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য কতগুলো বিধি-বিধান, নীতি-রীতি এবং ধারণা ও অনুমানের অনুসরণ করা হয়। হিসাব সংক্রান্ত এ সকল বিধি-বিধান, নীতি-রীতি এবং ধারণা ও অনুমান হিসাববিজ্ঞানের ধারণা, অনুমান, রীতি-নীতি হিসাবে পরিচিত। নিচে হিসাববিজ্ঞানের ধারণা, অনুমান ও রীতি-নীতির আলোচনা করা হলো।

পৃথক ব্যবসা সত্তা ধারণা (Business Entity Concept)

পৃথক ব্যবসা সত্তা ধারণা বা আর্থিক সত্তা ধারণাটি নির্দেশ করে যে, প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একটি পৃথক সত্তা এবং এর সকল লেনদেন পৃথক ভাবে হিসাব ভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ ব্যবসা এবং মালিক দুটি পৃথক সত্তা। ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন এবং মালিকের ব্যক্তিগত লেনদেন পৃথকভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। হিসাব লিখার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের মালিককে তৃতীয় পক্ষের মত একটি আলাদা পক্ষ হিসাবে গণ্য করতে হবে। এ বিধিটি এক মালিকানা, অংশীদারী এবং কোম্পানি সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

এ ধারণার ভিত্তিতে এক মালিকানা কারবারের মালিক, অংশীদারী কারবারের অংশীদার এবং কোম্পানির শেয়ার ধারক হতে মূলধন হিসাবে গৃহীত অর্থ মূলধন শিরোনামে উদ্বৃত্তপত্রের দায় দিকে এবং ঋণ হিসেবে গৃহীত অর্থ অংশীদার ঋণ/পরিচালক ঋণ শিরোনামে দায় দিকে দেখানো হয়। অত:পর উক্ত মূলধন ব্যবহার করে যে মুনাফা অর্জন করে তা মালিকের পাওনা হিসেবে গণ্য করে উক্ত অবন্টিত মুনাফাও উদ্বৃত্তপত্রে দায় হিসেবে প্রদর্শন করা হয়।

দুতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতিতে এ নীতিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নীতির কারণে মালিক হতে গৃহীত অর্থ একদিকে সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করে ডেবিট দিকে লিখা হয় এবং মালিকের নিকট দায় বিবেচনা করে মূলধন শিরোনামে ক্রেডিট দিকে লিখা হয়। ফলে উভয় দিক সমান হয়। তাছাড়া আর্থিক বিবরণীর ব্যবহারকারীগনও কারবারের কার্যক্রম এবং এক্ষেত্রে মালিক পক্ষের সম্পর্ক এবং উভয়ের পার্থক্য বিষয়ে ধারণা লাভ করতে পারে।

উদাহরণ:

জনাব ফরিদ তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবহৃত গাড়ীর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষন ব্যয় ২০,০০০ টাকা কারবারের ব্যয় হিসাবে প্রদর্শন করেছে এ যুক্তিতে যে সে কারবারের একক মালিক। যদিও সে কারবারের মালিক, হিসাব বিজ্ঞানের পৃথক সত্তা নীতি অনুসারে এটি কারবারের ব্যয় নয় বিধায় এ ব্যয়কে কারবারের ব্যয় হিসাবে প্রদর্শন করা যাবে না। এটি জনাব ফরিদের ব্যক্তিগত ব্যয়। যেহেতু কারবার হতে উক্ত অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে সেহেতু এটি জনাব ফরিদের উত্তোলন হিসাবে লিপিবদ্ধ হবে এবং এর জন্য ফরিদের মূলধন হ্রাস পাবে তথা কারবারের ব্যয় বৃদ্ধির পরিবর্তে দায় হ্রাস পাবে।

চলমান ব্যবসা ধারণা (Going Concern Concept)

চলমান ব্যবসা ধারণা বা চলমান ব্যবসা রীতি অনুসারে অনুমান করা হয় যে উক্ত ব্যবসা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বা অন্তত দীর্ঘ মেয়াদে বা উহার লক্ষ্যার্জন পর্যন্ত চলমান থাকবে। অর্থাৎ চলমান ব্যবসায় ধারণা অনুসারে অনুমান (Assumption)  করা হয় প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকর থাকবে এবং নিকট ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিকট ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, সে প্রতিষ্ঠানের হিসাব প্রস্তুতের ক্ষেত্রে চলমান ব্যবসায় ধারণা প্রয়োগ করা হয় না, বরং সমাপন (Gone concern) ধারণা অনুসারে উক্ত প্রতিষ্ঠানের হিসাব প্রস্তুত করা হয়।

সার্বজনিন হিসাব নীতির মধ্যে এ নীতিটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ন। এ ধারণার অনুপস্থিতিতে কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অগ্রীম পরিশোধ করা বা বকেয়া ব্যয় হিসাবভুক্ত করা, দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার যোগ্য সম্পদের মূল্য হতে অবচয় বাদ দিয়ে উদ্বৃত্তপত্রে সম্পদ হিসাবে প্রদর্শন, দায় সৃষ্টি এবং তা উদ্বৃত্তপত্রে প্রদর্শন  সম্ভব নয়। কারণ হলো কারবার দীর্ঘ মেয়াদে চলমান থাকবে এ ধারণার ভিত্তিতেই খরচ বকেয়া রাখাহয়, দায় সৃষ্টি করা হয়, অবচয় বাদ দেয়ার পর অবশিষ্ট সম্পদ ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যাবে বিধায় উদ্বৃত্তপত্রে প্রদর্শন করা হয় এবং অগ্রীম প্রদত্ত অর্থ বা তার মূল্য ভবিষ্যতে আদায় হবে মর্মে উদ্বৃত্তপত্রে প্রদর্শন করা হয়।

কোন কোন ক্ষেত্রে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন স্পষ্টত বুঝা যায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ মেয়াদে আর চালমান রাখা সম্ভব নয় অর্থাৎ ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে চলমান ব্যবসা ধারণা অনুসারে হিসাব প্রস্তুতের পরিবর্তে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার (Liquidation approach) পরিকল্পনা নিয়ে হিসাব প্রস্তুত করা হয় এবং বিষয়টি টিকা আকারে উল্লেখ করা হয়।

উদাহরণ:

১.   করিম ফুড লি: একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এর পূর্ববর্তী পাঁচ বছর ধারাবাহিক মুনফা অর্জনের ইতিহাস রয়েছে এবং সম্পদও দায় অপেক্ষা বেশী। এ ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানটি চলমান থাকবে অনুমান করে চলমান ব্যবসা ধারণার ভিত্তিতে হিসাব প্রস্তুত করবে। অর্থাৎ আদায়যোগ্য পাওনা, পরিশোধ যোগ্য দায়, ভবিষ্যতে ব্যবহার যোগ্য সম্পদ, বকেয়া ব্যয় এবং বিলম্বিত ব্যয় প্রদর্শন করে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হবে।

২.   শাপলা টেক্সটাইলস লি: একটি লোকসানজনক কোম্পানী। দায় পরিশোধে অক্ষম হওয়ায় একজন পাওনাদরের আবেদনের প্রেক্ষিতে কোর্ট চলতি সালে কোম্পনীটির বিলোপ সাধনের নির্দেশ প্রদান করেছে। যদিও কোম্পানির উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় অব্যাহত আছে এবং উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে অ্যাপিল আবেদন করেছে, উক্ত কোম্পানিটি লাভজনক ভাবে চালানো সম্ভব হবে না বিধায় উক্ত কোম্পানি দীর্ঘ মেয়াদে চলমান থাকবে বলে ধরে নেয়া হবে না এবং অ্যাপিল নিস্পত্তির পূর্বে চলমান ব্যবসায় ধারণা অনুসারে হিসাব প্রস্তুত করবে না। এ ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হবে ব্যবসা অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে এবং প্রতিষ্ঠানটি গুটিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে হিসাব প্রস্তুত করবে।

৩.  হায়দার প্লাষ্টিক এন্টারপ্রাইজ পলিথিন ব্যাগ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি সরকার পলিথিন ব্যাগ প্রস্তুত অবৈধ ঘোষনা করেছে এবং উক্ত ব্যবসায় জড়িত থাকলে সকল মেশিন ও যন্ত্রপাতি জব্দ করার ঘোষনা দিয়েছে। এমতাবস্থায় উক্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে না বিধায় ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে এবং উক্ত বছরের হিসাব চলমান ব্যবসা নীতিতে প্রস্তুত করতে পারবে না।

অর্থের এককে পরিমাপক ধারণা (Monetary Unit Assumption)

এ ধারণা অনুসারে ধরে নেয়া হয় ব্যবসার সকল লেনদেন, দায়-দেনা এবং সহায়-সম্পদ অর্থের একক দ্বারা পরিমাপযোগ্য। অর্থাৎ সকল অর্থনৈতিক কাযাবলী এবং আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে দিভাজক হিসাবে কাজ করে এবং উক্ত আর্থিক মূল্যই হিসাব বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এ ধারণা মতে মনে করা হয় অর্থের মূল্য তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল, নির্ভরযোগ্য, প্রাসঙ্গিক এবং সকল ব্যবসায়ের লেনদেনের ক্ষেত্রে উপযোগী। এ কারণে কোন একটি লেনদেন, সম্পদ বা দায় হিসাবভুক্ত করতে হলে উহা অর্থের এককে পরিমাপযোগ্য হওয়া জরুরী। অন্যথায় এটি হিসাবভুক্ত করা এবং আর্থিক প্রতিবেদনে প্রদর্শন করা সম্ভব হয় না।

উদাহরণ

১.      একই পরিবারভুক্ত কিছু উদ্যোক্তা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা শুরু করার প্রক্কালে তাদের পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত দালানসহ একখন্ড জমি এবং নগদ অর্থ ব্যবসায়ের মূলধন হিসাবে সরবরাহ করলো। এখানে উক্ত দালান ও ভূমি ব্যবসায়ের মূলধন হিসাবে হিসাবভুক্ত করার জন্য উক্ত দালান ও ভূমির আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে এবং আর্থিক মূল্যই ভূমি ও দালান শিরোনামে কারবারের উদ্বৃত্তপত্রে সম্পদ দিকে এবং মূলধন শিরোনামে উদ্বৃত্তপত্রের দায় দিকে দেখাতে হবে। অর্থ মূল্য নির্ধারন না করে উক্ত দালান ও ভূমি হিসাবে প্রদর্শনের সুযোগ নাই। অধিকন্তু উক্ত সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া সত্বেও উক্ত মূল্যেই তা হিসাবে প্রদর্শন করতে হবে। পূনমূল্যায়ন না করা পর্যন্ত বর্ধিত মূল্যে প্রদর্শনের সুযোগ নাই।

২.      হারভেষ্ট মিল্ক পাওডারের মধ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পাওয়ার গুজবের প্রেক্ষিতে তাদের বিক্রয় উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়, ফলে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের মূখে পড়ে। উক্ত গুজবের কারণে বিক্রয় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্বেও উক্ত ক্ষতি অর্থ দ্বারা পরিমাপযোগ্য নয় বিধায় তা হিসাবভূক্ত করা যাবে না।

সময়কাল বা হিসাবকাল ধারণা (Time Period Assumption)

হিসাব বিজ্ঞানের এ নীতি অনুসারে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের জন্য একটি হিসাবকাল থাকতে হবে। উক্ত হিসাবকালের মধ্যে সংগঠিত সকল লেনদেন উক্ত আর্থিক বিবরণীর অন্তর্ভুক্ত হবে এবং উক্ত সময়ের আগের বা পরের কোন লেনদেন বা ঘটনা উক্ত হিসাব বিবরণীর অন্তর্ভুক্ত হবে না। এ ধারণা অনুসারে কোন এক মাস বা কোন ত্রৈমাসিক বা এক বছর সময়রে জন্য আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। উক্ত সময়ের মধ্যে সংঘটিত সকল লেনদেন হিসাব বিবরণীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ নীতি অনুসারে ব্যবসায়ের নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং উক্ত হিসাবকালের শেষ দিকে আর্থিক অবস্থার চিত্র পাওয়া যায়। এ নীতির ভিত্তিতে হিসাব তৈরী করার কারণে বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য ব্যবহারকারীগন কোন নিদিষ্ট মাস, ত্রৈমাস বা বছরের ব্যবসায়িক ফলাফল, দক্ষতা ও আর্থিক অবস্থা দেখতে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।

উদাহরণ

সীমান্ত ট্রেডিং একটি বৃহদাকার বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান। উক্ত প্রতিষ্ঠান এক পঞ্জিকা বর্ষের ১লা জুলাই তারিখ হতে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন সময়কে হিসাবকাল হিসেবে নির্ধারণ করেছে। সুতরাং প্রত্যেক হিসাব বর্ষে ১লা জুলাই তারিখ হতে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন সময় পর্যন্ত সংগঠিত সকল লেনদেন, ক্রয় বিক্রয় ও অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য ঘটনা উক্ত বছরের হিসাব বিবরণীর অন্তর্ভুক্ত হবে। পহেলা জুলই এর আগে বা ৩১ শে জুনের পরে সংগঠিত কোন ঘাটনা উক্ত হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

দ্বৈত হিসাব ধারণা (Dual Aspect Concept)

দ্বৈত হিসাব ধারণা হিসাব বিজ্ঞানে দ্বৈত নীতি (Duality Principle) নামেও পরিচিত। এ নীতির উপর দুতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত। এ নীতি অনুসারে প্রতিটি লেনদেনের দুটি পক্ষ থাকবে। কোন একটি লেনদেনের জন্য যে পরিমাণ অর্থ হিসাব বইয়ের ডেবিট দিকে লিখা হবে ঠিক তার সমপরিমাণ অর্থ হিসাব বইয়ের ক্রেডিট দিকে লিখতে হবে এবং হিসাব বই সমূহের ডেবিট এবং ক্রেডিট দিকের যোগ ফল সমান হবে। একতরফা হিসাব পদ্ধতিতে কোন একটি লেনদেন কেবল মাত্র একবার লিখা হয়। কিন্তু দ্বৈত হিসাব ধারণা অনুসারে দু তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাবের দু দিকে অন্তত: দুটি হিসাবে লিখা হয়।

উদাহরণ:

সজিব ট্রেডিং তার কর্মচারীদের এক লক্ষ টাকা বেতন চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে।

দ্বৈত হিসাব ধারণা অনুসারে এ লেনদেনটি দুটি হিসাবে, বেতন হিসাব এবং ব্যাংক হিসাব, লিপিবদ্ধ হবে। বেতন হিসাবে ডেবিট দিকে এবং ব্যাংক হিসাবে ক্রেডিট দিকে লিখতে হবে।  

হিসাব সংক্রান্ত প্রথা বা রীতি

ঐতিহাসিক ব্যয় বা ক্রয়মূল্য নীতি(Historical Cost Principle)

এ নীতি অনুসারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার প্রায় সকল লেনদেন, সম্পদ ও দায় উহাদের অধিগ্রহণ মূল্য বা ক্রয় মূল্যে হিসাবভ্ক্তু করবে। অর্থাৎ কোন সম্পদের বিপরীতে প্রতিষ্ঠান যে আর্থিক মূল্য পরিশোধ করবে শুধু উক্ত মূল্যই আর্থিক বিবরণীতে প্রদর্শন করতে পারবে। মূল্যস্ফীতি বা মূল্য সংকোচনের কারণে উক্ত মূল্য পরিবর্তন করে দেখানো যাবে না। একই ভাবে দায়, পণ্যক্রয় ইত্যাদিও ক্রয় মূল্যেই হিসাবভুক্ত করতে হয়।

উল্লেখ্য, কখনো কখনো কোন কোন সম্পদের বাজার মূল্য বৃদ্ধি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্রয়মূল্য এবং প্রকৃত মূল্যের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য থাকায় আর্থিক অবস্থার প্রকৃত প্রতিচ্ছবি প্রদর্শিত হয় না। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুসারে ফেয়ার ভ্যাল্যূতে প্রদর্শন করা যেতে পারে।

উদাহরণ

১.    মেঘনা ডাইং ১৯৯০ সালে পাঁচ লক্ষ টাকা মূল্যে একখন্ড জমি ক্রয় করে। বর্তমানে উহার বাজার মূল্য দাড়িয়েছে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। তথাপিও মেঘনা ডাইং উহার উদ্বৃত্তপত্রে উক্ত জমির মূল্য পাঁচ লক্ষ টাকা দেখাবে। তবে আন্তর্জাতিক হিসাব মান ১৬ অনুসারে যদি পূন মূল্যায়ন করে বর্ধিত মূল্য হিসাবভুক্ত করা হয়, সে ক্ষেত্রে পুনমূর্ল্যায়িত মূল্যে প্রদর্শন করা যাবে। বর্ধিত মূল্য উদ্বৃত্তপত্রের দায় দিকে পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি হিসেবে দেখাতে হবে।

২.    মেঘনা ডাইং ২০১০ সালে দুই লক্ষ টাকা মূল্যে একটি মেশিন ক্রয় করে। অবচয় বাদ দেয়ার পর যার বই মূল্য বর্তমানে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। মডেল পরিবর্তনের কারণে উক্ত মেশিনের বর্তমান আদায়যোগ্য মূল্য হলো মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা। আদায় যোগ্য মূল্য হ্রাস পাওয়া সত্বেও মেঘনা ডাইং উদ্বৃত্তপত্রে উক্ত মেশিনের মূল্য উক্ত নীতি অনুসারে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দেখাবে।

আয়ের স্বীকৃতি নীতি/আদায়করন নীতি (Revenue Recognition Principle)

এ নীতি অনুসারে যখন কোন আয় আদায় হবে বা আদায় যোগ্য হবে বা অর্জিত হবে তখন উক্ত আয় হিসাবভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ কোন আয় অর্জিত হলে যদি উক্ত আয় আদায় যোগ্য হয় তবে উহা হিসাব ভুক্ত করার জন্য আদায়ের অপেক্ষা করার প্রয়োজন নাই। উহা আদায় যোগ্য হওয়ার সাথে সাথে হিসাবভুক্ত করা যাবে। এ নীতি হিসাব বিজ্ঞানের বকেয়া নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ নীতির কারণেই আয় আদায় না হওয়া সত্বেও আয় হিসাবে হিসাবভুক্ত করা যায়।

যখন কোন পণ্য বা সেবা অর্থ বা অন্যকোন সম্পদের বিনিময়ে প্রদান করা হয় তখনই আয় নগদে আদায় বা প্রাপ্য বা আদায়যোগ্য হয়। সুতরাং যখন কোন সেবা বা পণ্য নগদ বা বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে বাকিতে বিক্রয় করা হয় এবং পণ্যের মালিকানা হস্তান্তরিত হয় তখনই উহার মূল্য আদায়যোগ্য হয়। যদি পণ্যের মালিকানা হস্তান্তরিত না হয় তবে উহার মূল্য আদায় যোগ্য হবে না এবং আয় হিসাবে হিসাবভুক্ত করা যাবে না। 

উদাহরণ

ফিডকো ফার্নিচার কোন একজন ক্রেতার নিকট হতে ৫০,০০০ টাকা আগ্রীম গ্রহণ করে তিন লক্ষ টাকা মূল্যের কাঠের দরজা ৩১-১২-২০১৫ তারিখে ডেলিভারী দেয়ার শর্তে ১-১১-২০১৫ তারিখে বিক্রয় করে । এখানে যতক্ষন না উক্ত দরজা সরবরাহ না করছে ততক্ষন আগ্রীম হিসেবে গৃহীত ৫০,০০০ টাকা আয় হিসাবে হিসাব ভুক্ত করা হবে না। ৩১-১২-২০১৫ তারিখে দরজা ডেলিভারী দেয়ার পর অবশিষ্ট ২৫০,০০০ টাকা বকেয়া থাকা সত্বেও সম্পূর্ণ ৩০০,০০০ টাকা আয় হিসাবে হিসাব ভুক্ত করা হবে।

আয়-ব্যয় মিলকরণ নীতি (Matching Principle)

হিসাব বিজ্ঞানে আয়-ব্যয় মিলকরণ নীতি একটি গুরুত্বপূর্ন নীতি। হিসাবকাল ধারণা অনুসারে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বা সময় কালের জন্য হিসাব প্রস্তুত করে থাকে। আয়-ব্যয় মিলকরণ নীতি অনুসারে প্রতিটি হিসাবকালের আয়ের বিপরীতে সে হিসাবকালের ব্যয় হিসাবভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ এক হিসাব কালের ব্যয় অন্য হিসাবকালের আয়ের বিপরীতে দেখানো যাবে না। কেননা হিসব বিবরণী প্রস্তুতের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো কারবারের ব্যবসায়িক ফলাফল নিরূপণ করা। আয়ের বিপরীতে সংগঠিত ব্যয় দেখানো না হলে সঠিক ফলাফল নিরূপণ করা যাবে না। প্রতিটি আয় এবং ব্যয় যদি সংশ্লিষ্ট হিসাব কালের হিসাব বিবরণীতে প্রদর্শন করা হয়, সে ক্ষেত্রেই কেবল সম্ভব ব্যয় সমূহ সংশ্লিষ্ট আয়ের বিপরীতে প্রদর্শন করা এবং সঠিক আর্থিক ফলাফল নিরূপণ করা। মিলকরণ নীতি অনুসারে কারবারের হিসাবরক্ষনের জন্য বকেয়া ভিত্তিক হিসাব প্রস্তুত করতে হয়।

উদাহরণ:১

মডার্ণ ফার্মা একটি ঔষধ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে এ মর্মে চুক্তি করেছে যে, মডার্ন ফার্মার বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার জন্য মোট বিক্রয়ের উপর ৫% কমিশন প্রদান করা হবে। মডার্ন ফার্মা ২০১৫ হিসাববর্ষে এক কোটি টাকা বিক্রয় করেছে এবং  হিসাব চুড়ান্ত করার পর ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে কমিশন হিসাবে পাঁচ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছে।

আয়-ব্যয় মিলকরণ নীতি অনুসারে যেহেতু উক্ত কমিশন ২০১৫ হিসাববর্ষের বিক্রয়ের সাথে সম্পর্কিত, মডার্ন ফার্মা উক্ত কমিশন যদিও ২০১৬ হিসাব বর্ষে পরিশোধ করেছে, ২০১৫ সালের হিসাব বিবরণীতে প্রদর্শন করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে উক্ত কমিশন ২০১৫ সালের হিসাবে ব্যয় হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে অথবা এর বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হবে। অন্যথায় ২০১৫ সালে মুনাফার পরিমাণ প্রকৃত মুনাফা হতে পাঁচ লক্ষ টাকা বেশী দেখানো হবে।

উদাহরণ:২

মডার্ন ফার্মা ঔষধ উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরী পরবর্তী মাসের পহেলা তারিখে পরিশোধ করে। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের মজুরী জানুয়ারি মাসের এক তারিখে পরিশোধ করে। মিলকরণ নীতি অনুসারে জানুয়ারি মাসে পরিশোধ করা সত্বেও উক্ত মজুরী ডিসেম্বর মাসের ব্যয় গণ্য করে উক্ত মাসের ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যথায় ডিসেম্বর মাসের ব্যয় কম দেখানো হবে, ফলে মুনাফার পরিমাণ প্রকৃত মুুনাফা হতে বেশী দেখানো হবে।

আয়-ব্যয় স্বীকৃতি সংক্রান্ত নীতিমালা

রক্ষণশীলতার নীতি (Conservatism principle)

হিসাববিজ্ঞানের রক্ষণশীল নীতি নির্দেশ করে যখন কোন ব্যয় বা দায় সৃষ্টি হয় তা অনতিবিলম্ভে হিসাবভুক্ত করতে হবে এবং যখন  কোন আয় বা সম্পদ সৃষ্টি হয় তা আদায়যোগ্য হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে হিসাবভুক্ত করতে হবে। যখন কোন একটি লেনদেন হিসাবভুক্ত করার ক্ষেত্রে দুটি গ্রহণযোগ্য বিকল্প থাকবে তখন রক্ষণশীলতার নীতি অবলম্ভন করে হিসাব রক্ষক এমন বিকল্প পদ্ধতির অনুসরন করবেন যাতে করে অপেক্ষাকৃত কম মুনাফা প্রদর্শিত হয়। রক্ষণশীলতা নীতির মূল উদ্দেশ্য হলো কারবারের মূলধনের সুরক্ষা। কারণ প্রদর্শিত আয় আদায় না হলে এবং উক্ত আয় প্রদর্শনের কারণে সৃষ্ট মুনাফা বন্টন হয়ে গেলে কারবারের মূলধন হ্রাস পাবে। অপরদিকে উক্ত আয় বর্তমান বছরে না দেখানোর কারণে মুনাফা কিছু কম প্রদর্শিত হলেও মূলধন হ্রাস পাওয়ার তথা কারবারের ভিত দূর্বল হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ কারণে রক্ষণশীলতার নীতি অনুসরণ করে যেখানে কম মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেখানে কম মুনাফা প্রদার্শন করা হয়।

এখানে উল্লেখ্য, আয় বা সম্পদের আদায়যোগ্য হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সত্বেও রক্ষণশীলতার নীতির ভিত্তিতে উক্ত আয় প্রদর্শন না করার সুযোগ নেই। এ নীতি অনুসারে শুধুমাত্র তখনই কম মুনাফা দেখানোর সুযোগ আছে যখন অপেক্ষাকৃত কম মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

বস্তুনিষ্ঠতার নীতি (Materiality principle

হিসাব বিজ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠতার নীতি অনুসারে কোন একটি ব্যয়কে সম্পদ বাচক ব্যয়, না মুনাফা বাচক ব্যয় গণ্য করা হবে অর্থাৎ আয় ব্যয় হিসাবে প্রদর্শিত হবে, না সম্পদ হিসাবে প্রদর্শিত হবে তা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়তন এবং ব্যয়ের আকারের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উক্ত ব্যয়টি সম্পদ জাতীয় হওয়া সত্বেও অর্থাৎ উক্ত ব্যয় হতে একাধিক আর্থিক বছরে সুবিধা পাওয়া গেলেও যদি তা প্রতিষ্ঠানের আকারের তুলনায় সামান্য ব্যয় হিসাবে প্রতিয়মান হয় তবে তা উপেক্ষা করা যেতে পারে এবং সম্পদ জাতীয় ব্যয় হিসেবে গণ্য করার পরিবর্তে মুনাফা জাতীয় ব্যয় হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। হিসাব বিজ্ঞানের এ নীতিটি আয়-ব্যয় মিলকরন নীতির বিপরীত। এতদ সত্বেও অগুরুত্বপূর্ন সম্পদ জাতীয় ব্যয় সম্পদ হিসেবে প্রদর্শন করা হিসাব রক্ষণের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক নয়।

সামঞ্জস্যশীলতা  নীতি(Consistency Principle)

সামঞ্জস্যশীলতার নীতি নির্দেশ করে যখন কোন প্রতিষ্ঠান কোন একটি হিসাব নীতি গ্রহণ করবে বা কোন একটি হিসাব পদ্ধতির প্রয়োগ করবে ভবিষ্যতেও একই হিসাব নীতি বা পদ্ধতির প্রয়োগ করবে। অর্থাৎ প্রত্যেক বছর ধারাবাহিকভাবে একই নীতির প্রয়োগ করবে। একেক বছর একেক নীতি বা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারবে না। যদি কোন প্রতিষ্ঠান কোন বছর বর্তমানে অনুসৃত কোন নীতি বা পদ্ধতির পরিবর্তন করতে চায়, তবে উক্ত পরিবর্তনের কারণ এবং হিসাবে এর প্রভাব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে পরিবর্তিত নীতি বা পদ্ধতির প্রয়োগ করতে হবে।

সামঞ্জস্যশীলতা নীতি প্রয়োগ করা হলে এক বছরের আর্থিক বিবরণী অন্য বছরের সাথে তুলনা যোগ্য হয়। এককেক বছর একেক নীতি বা পদ্ধতির প্রয়োগ করা হলে বিভিন্ন বছরের আর্থিক বিবরণীর মধ্যেও সমতা থাকে না বিধায় একেক বছরের আর্থিক বিবরণীর মধ্যে তুলনা করা যায় না। এ কারণে সামঞ্জস্যশীলতার নীতিটি হিসাব বিজ্ঞানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বুদ্ধিমত্তা নীতি (Prudence Concept)

কখনো কোন কোন লেনদেনের সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনার মধ্যে অনিশ্চয়তা থাকে, অথচ লেনদেন সমূহ যথা সময়ে হিসাবভুক্ত করতে হয়। এ ধরণের অনিশ্চয়তার কারণে হিসাব রক্ষককে বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে লেনদেনের পরিমাণ প্রাক্কলন (অনুমান) করতে হয়। এ ধরণের প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে হিসাব রক্ষককে সতর্কতার সাথে কাজ করতে হয় এবং বুদ্ধি মত্তার প্রয়োগ করতে হয়। হিসাব রক্ষক বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করে নিশ্চিত করবেন যে, সম্পদ ও আয় অতি-মূল্যায়িত বা বেশী প্রদর্শিত হয়নি এবং ব্যয়, ক্ষতি বা দায় কম দেখানো হয়নি।

পূর্ণপ্রকাশ নীতি (Full Desclosure Principle)

হিসাব বিজ্ঞানের পূর্ণপ্রকাশ নীতি অনুসারে হিসাব বিবরণীতে এমন সকল তথ্য উপস্থাপন করতে হবে যে সকল তথ্য হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করতে পারে। সাধারণত বিনিয়োগকারী, পাওনাদার, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, কর কর্তৃপক্ষ, গবেষক ও সাধারণ জনগণ তাদের প্রয়োজন অনুসারে হিসাব তথ্যের ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে বিনিয়োগকারী, পাওনাদার, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও করকর্তৃপক্ষ আর্থিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। কোন তথ্য গোপন করা হলে বা কোন তথ্য অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হলে তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ ব্যহত হয়। এ কারণে হিসাব বিজ্ঞানের এ নীতি অনুসারে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সন্নিবেশিত করে হিসাব বিবরণী, বিশেষ করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির হিসাব বিবরণী, প্রস্তুত ও প্রকাশ করতে হয়। এ সকল তথ্যের মধ্যে আর্থিক এবং অ-আর্থিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

ব্যয়সুবিধা সম্পর্ক (Cost Benefit relationship)

ব্যয় সুবিধা সম্পর্ক নীতি অনুসারে আর্থিক বিবরণীতে প্রদর্শিক তথ্য পরিবেশনার ব্যয় উক্ত তথ্য হতে প্রাপ্ত সুবিধার বেশী হবে না। এর অর্থ হলো হিসাব রক্ষক হিসাব বিবরণীতে অপ্রয়োজনীয়, গুরুত্বহীন তথ্য প্রকাশ করে ব্যয় বৃদ্ধি করবে না। হিসাব বিবরণীতে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হবে। অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপনার জন্য সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়। যদি এ সকল তথ্য হতে ব্যবহারকারী কোন সুবিধা না পায় তাহলে সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে এ সকল তথ্য উপস্থাপন না করাই শ্রেয়।

শিল্পরীতি(Industry Practice)

কোন শিল্পের বিশেষ প্রকৃতির কারণে কোন কোন লেনদেন হিসাব বিজ্ঞানের সার্বজনীন স্বীকৃত নীতি অনুসারে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়না। শিল্প রীতি অনুসারে এ ধররনের লেনদেন সমূহ হিসাব বিজ্ঞানের সাধারণ রীতি নীতির বাইরে এসে উক্ত শিল্পের বিশেষ বা ব্যতিক্রম রীতি অনুসারেই উপস্থাপন করা হবে। অর্থাৎ যে সকল লেনদেনের ক্ষেত্রে শিল্পের বিশেষ প্রকৃতির কারণে হিসাব বিজ্ঞানের সাধারণ রীতি নীতি বা হিসাবমান প্রয়োগ করা যায় না সে সকল লেনদেন হিসাব বিজ্ঞানের সাধারণ রীতি নীতি বা হিসাবমানের পরিবর্তে উক্ত শিল্পে প্রচলিত রীতি প্রয়োগ করা হবে।

নিরপেক্ষতার নীতি(Objectivity concept)

হিসাব বিজ্ঞানের নিরপেক্ষতা বা নৈব্যক্তিকতা নীতি অনুসারে হিসাব বিবরণীতে তথ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে এবং প্রতিটি তথ্য প্রমাণভিত্তিক হতে হবে। হিসাব বিবরণীতে কোন অসত্য, ইচ্ছাকৃত ভুল, পক্ষপাতদুষ্ট ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা যাবে না। সকল তথ্য প্রাসঙ্গিক এবং নির্ভরযোগ্য হওয়া আবশ্যক।

আন্তর্জাতিক হিসাবমান

প্রায় পাঁচ শত বছর আগে লুকা পেসিওলি কর্তৃক দু’তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি প্রণয়নের পর ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সাথে হিসাবরক্ষণ ও হিসাব বিবরণী প্রস্তুতের ক্ষেত্রেও উন্নতি সাধিত হয়। তবে ১৯২৯ সালে যুক্ত রাষ্ট্রের ষ্টক মার্কেটে ধ্বস নামার পূর্বে হিসাবমান প্রণয়নের কাজ শুরু হয়নি। ১৯২৯ সালে যুক্ত রাষ্ট্রের ষ্টক মার্কেটে ধ্বস নামার পর বড় বড় বিনিয়োগকারী, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারে মূলত আর্থিক প্রতিবেদনের অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিকর উপস্থাপনার কারণে শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যস্ফিতি দেখা দেয় এবং পরিনাম হিসাবে শেয়ার বাজারে ধ্বস নামে এবং ব্যাপক মন্দা দেখা দেয়।

এ পরিস্থিতিতে ১৯৩৩ সালে এবং ১৯৩৪ সালে যথাক্রমে সিকিউরিটিজ এক্ট এবং সিকিরিটিজ এক্সচেঞ্জ এক্ট প্রণয়ন করা হয়। উক্ত সিকিউরিটিজ এক্ট এর মধ্যে ইনিশিয়াল অফারিং এর জন্য হিসাব বিবরণী এবং নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশের (Accounting and disclosure requirements)বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং সিকিরিটিজ এক্সচেঞ্জ এক্ট এ সেকেন্ডারী মার্কেটের ক্ষেত্রে হিসাব বিবরণীতে নির্দিষ্ট তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।

পরবর্তীতে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পনীর হিসাব বিবরণীর জন্য হিসাবমান প্রণয়নের ক্ষমতা অর্পন করে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠন করা হয় যা Financial Reporting Releases (FRRs) শিরোনামে কিছু বিধি প্রকাশ করে।

পরবর্তীতে American Institute of Accountants Gi GKwU KwgwU, the Committee on Accounting Procedure (CAP) প্রায় ৫১টি রিসার্চ বুলেটিন প্রকাশ করে

অপরদিকে শিল্পোন্নত বিভিন্ন দেশসমূহ তাদের দেশে নিজেদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হিসাবমান তৈরী ও অনুসরণ করে আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে থাকে। বিভিন্ন দেশের হিসাবমানে পার্থ্যক্য দেখা দেয়। কারণ বিভিন্ন দেশের ব্যবসার ধরণ, দেশীয় আর্থিক, শিল্প-বানিজ্য, কোম্পনী ও রাজস্ব আইনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এতে করে এক দেশের আর্থিক প্রতিবেদনের সাথে অন্য দেশের আর্থিক প্রতিবেদনের মধ্যে পার্থক্য হয় এবং বিদেশী বিনিয়োগকারী বিশেষ করে বহুজাতিক কোম্পানি সমূহের হিসাব প্রণয়নে সমস্যা দেখা দেয়। এ সকল সমস্যা নিরসনে সকল দেশের আর্থিক বিবরণীর মধ্যে সমতা আনার উদ্দেশ্যে আর্ন্তর্জাতিক হিসাবমান প্রণয়নকারী একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপ ব্যাপক চেষ্টা অব্যাহত রাখে। বিশেষ করে ওহংঃরঃঁঃব ড়ভ ঈযধৎঃবৎবফ অপপড়ঁহঃধহঃং রহ ঊহমষধহফ ধহফ ডধষবং (ওঈঅঊড) এর তৎতকালীন প্রেসিডেন্ট হেনরি বেনসন এর প্রচেষ্টায় ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি উপরোক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ঋঅঝই এর অনুরুপ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ অপপড়ঁহঃরহম ঝঃধহফধৎফং ঈড়সসরঃঃবব (ওঅঝঈ) গঠন করা হয়। ওঅঝঈ ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ৪১ টি আন্তর্জাতিক হিসাব মান প্রকাশ করে।

২০০২ সাল হতে ওঅঝই এবং ঋঅঝই ইউএস এঅঅচ এবং ওঅঝ/ওঋজঝ এর মধ্যেকার পার্থক্য নিরসনের জন্য যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ইউএস এঅঅচ এবং অন্যান্য দেশ সমূহ ওঅঝ/ওঋজঝ অনুসারে হিসাব বিবরণী প্রণয়ন করছে। তবে ওঅঝই এবং ঋঅঝই উভয় প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে কিছু হিসাবমান প্রণয়নে কাজ করছে। বাংলাদেশ ওঅঝই কর্তৃক গৃহীত এবং প্রনীত যথাক্রমে ওঅঝ এবং ওঋজঝ অনুসরণ করে হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করে। বাংলাদেশে প্রচলিত কোম্পানি আইন ১৯৯৪, ব্যাংক কোম্পনী আইন এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ বিধিতে আন্তর্জাতিক হিসাবমান অনুসরণের নির্দেশনা রয়েছে। বাংলাদেশের আর্থিক হিসাব পেশা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওঈঅই দেশের হিসাব প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয় সমূহ বিবেচনা করে প্রয়োজন অনুসারে ওঅঝ/ওঋজঝ গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশে পরিচালিত দেশীয় ও বৈদেশিক কোম্পানি সমূহকে হিসাববিবরণী প্রস্তুতে ওঈঅই কর্তৃক ইঅঝ/ইঋজঝ গৃহীত ওঅঝ/ওঋজঝ এর অনুসরণ করতে হয়।

BAS No.BAS Title
1Presentation of Financial Statements
2Inventories
7Statement of Cash Flows
8Accounting Policies, Changes in Accounting Estimates and Errors
10Events after the Reporting
Period
11Construction Contracts
12Income Taxes
16Property, Plant & Equipment
17Leases
18Revenue
19Employee Benefits
20Accounting of Government Grants and Disclosure of Government Assistance
21The Effects of Changes in Foreign Exchange Rates
23Borrowing Costs
24Related Party Disclosures
26Accounting and Reporting by Retirement Benefit Plans
27Separate Financial Statemens
28Investments in Associates and Joint Ventures
IAS 29Financial Reporting in Hyperinflationary Economics
31Interest in Joint Ventures
32Financial Instruments: Presentation
33Earnings per Share
34Interim Financial Reporting
36Impairment of Assets
37Provisions, Contingent Liabilities and Contingent Assets
38Intangible Assets
39Financial Instruments: Recognition and Measurement
40Investment Property
41Agriculture
            
IFRS / BFRS No.Title
BFRS 1First-time adoption of International financial Reporting Standards
BFRS 2Share-based Payment
BFRS 3Business Combinations
BFRS 4Insurance Contracts
BFRS 5Non-current Assets Held for Sale and Discontinued Operations
BFRS 6Exploration for and Evaluation of Mineral Resources
BFRS 7Financial Instruments: Disclosures
BFRS 8Operating Segments
IFRS 9Financial Instruments
BFRS 10Consolidated Financial Statements
BFRS 11Joint Arrangements
BFRS 12Disclosure of Interests in other Entities
BFRS 13Fair Value Measurement
BFRS 14Regulatory Deferral Accounts
BFRS 15Revenue from Contract with Customers

বাকি অংশ দেখার জন্য পিডিএফ কপি ডাউনলোড করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *